দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ২০ জানুয়ারি: রথযাত্রাতেই যাত্রা ভঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের! আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা বাহিনী সংক্রান্ত মামলায় জোর ধাক্কা সুপ্রিম কোর্টে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলো সুপ্রিম কোর্ট। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে (বৃহস্পতিবার) কংগ্রেস ও বিজেপির করা একটি মামলায় শুধু স্পর্শকাতর বুথ নয়, রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ওইদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নির্দেশ দেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চেয়ে পাঠাতে হবে। এরপর এই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয় সুপ্রিম কোর্টে।

thebengalpost.net
কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই হবে রাজ্যে নির্বাচন:

সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বি.ভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘‘আপনারা পাঁচ রাজ্য থেকে পুলিশ চেয়েছেন। আর হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে। খরচ তো কেন্দ্র দেবে। আপনাদের অসুবিধা কোথায়? তা ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাহিনী হলে সমস্যা কোথায়?’’ রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশ যথেষ্ট সমর্থ। পুলিশকর্মী কম থাকায় অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পরিকল্পনা বদল করতে হবে। নির্বাচনের মুখে যা সমস্যার।’’ এ কথা শোনার পর বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা আপনাদের উপর নয় তা হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে চিন্তিত কেন? আপনারা আপনাদের কাজ করুন। যেখান থেকেই বাহিনী আসুক, আপনাদের অসুবিধা কোথায়?’’ এর পর কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমরাও উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবি করি। কিন্তু, এখানে হাই কোর্ট আমাদের উপর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে। সেটা আমরা কী ভাবে করব? এটা আমাদের কাজ নয়।’’ বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘‘ভোটে কোনও রকম অশান্তি হবে সেটা আশা করা যায় না। অতীতে রাজ্যে হিংসার ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। এই অবস্থায় হাইকোর্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে। সেখানে অসুবিধার কিছু দেখছি না।”

ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও। তাদের আইনজীবী বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। এই অবস্থায় আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই ভোট চাই।’’ রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘কোনও বুথ, এলাকা নয়। সারা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রাজ্যকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘‘এটা তো অন্য কোনও পরিস্থিতির জন্য নয়। নির্বাচনের জন্য। এখানে অন্য ভাবে দেখবেন কেন?’’ বিজেপির আইনজীবী হরিশ সালভে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নীরবতার কারণেই হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশ দিয়েছে। ওই রাজ্যে কমিশন সম্পূর্ণ রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে সেখানে একাধিক ঘটনা ঘটেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচনের নির্ঘণ্ট দেখলে হাই কোর্টের নির্দেশ পরিষ্কার হবে। নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে ৮ জুন। হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ১৫ জুন। অর্থাৎ, তার আগে পর্যন্ত তাদের কোনও পরিকল্পনাই চোখে পড়েনি। তারা স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিতই করতে পারেনি। আর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরোধিতা করে তারা বলছে সব পরিকল্পনা পূর্বের করা ছিল। কোথায় পরিকল্পনা?’’ এরপরই সমস্ত দিক বিবেচনা করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।