দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: স্বাধীনতা সংগ্রামী, মুন্ডা বিদ্রোহ “উলগুলান” এর নেতা ‘ধরতি আবা’ বীরসা মুন্ডার (তথা, ‘বীরসা ভগবান’) জন্মদিনকে সামনে রেখে ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ কমিউনিকেশন এর মেদিনীপুর ফিল্ড অফিসের উদ্যোগে এবং শালবনী ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের সহযোগিতায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠে অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনের ‘জনজাতি গৌরব দিবস’। মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর বীরসা মুন্ডার ১৪৮তম জন্মজয়ন্তীতে বীরসা মুন্ডার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও চারাগাছে জল ঢেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন ফিল্ড অফিসার সুদীপ্ত বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানান মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া। তিনদিনের এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত হয় নানা কর্মসূচি। চার দলীয় মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতা, তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, সচেতনতা শিবির, কুইজ ও বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় তিনদিন ধরে। পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাজিক, নাটক ও সঙ্গীতানুষ্ঠান সহ অন্যান্য কর্মসূচি।
এদিকে, ফুটবল প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। অন্য ম্যাচে, গৌতম স্মৃতি সাতপাটি বীণাপানী বিদ্যামন্দিরকে হারিয়ে ফাইনালে যায় মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্রীরা। ফাইনালে পিড়াকাটাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মৌপাল উচ্চ বিদ্যালয়। মূল অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে আদিবাসী রীতি অনুযায়ী অতিথি বরণ, ‘ধরতি আবা’ বীরসা মুন্ডাকে উৎসর্গ করে সঙ্গীত, একক নাটক ‘বিদ্রোহ’ এবং চারাগাছে জলসিঞ্চনের মাধ্যমে ধরিত্রীকে শস্য শ্যামলা করার অঙ্গীকার কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। তারপর, কুইজ মাস্টার কৃষ্ণপ্রসাদ ঘড়া’র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় জমজমাট কুইজ অনুষ্ঠান। কুইজে প্রথম হয় ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি টিম, দ্বিতীয় হয় মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ এবং তৃতীয় হয় ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের অপর একটি টিম। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথা মুখ্য আলোচক খড়্গপুর আইআইটি (Kharagpur IIT)’র অধ্যাপক ড. ব্রজেশ দুবে তাঁর দুই ছাত্রের সহযোগিতায় “বর্জ্য থেকে সম্পদ: সমাজ সংযোগ” শীর্ষক মনোজ্ঞ আলোচনা উপস্থাপন করেন। তিন দিন ধরেই পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এলডিএম শুভঙ্কর মাহাতো’র নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের সামাজিক সুরক্ষা মূলক বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে বোঝানো হয়। খুলে দেওয়া হয় অ্যাকাউন্টও। তৃতীয় তথা শেষ দিনে, পুরস্কার প্রদান ও লোকনিকেতনের নাটক ও সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগীদের হাতে সার্টিফিকেট ও সফল প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার, ট্রফি ও সার্টিফিকেট তুলে দেন আয়োজক সংস্থার মেদিনীপুর ইউনিটের ক্ষেত্রীয় প্রচার আধিকারিক সুদীপ্ত বিশ্বাস সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিনে প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করতে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে উপস্থিত ছিলেন ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী, পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম জানা, গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তথা বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ড. প্রলয় বিশ্বাস, কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুনাশু দে, মাষ্টার অ্যাথলিট ভানুপদ মাহাতো, চুয়াডাঙ্গা হাই স্কুলের সহ শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া, সঙ্গীত শিল্পী সমীর মোহান্তি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। অনুষ্ঠান সুচারুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূন কুমার পড়িয়া। অন্যদিকে, আয়োজক বিদ্যালয় এবং অংশগ্রহণকারী সকল বিদ্যালয় সহ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ক্ষেত্রীয় প্রচার আধিকারিক সুদীপ্ত বিশ্বাস।