দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ সেপ্টেম্বর: গুরুতর অসুস্থ। মুখ দিয়ে রক্ত, ফেনা বের হচ্ছে এমন এক যুবককে মেদিনীপুর শহরের LIC মোড়ে বাস থেকে নামিয়ে এক রিক্সাচালকের হাতে ২০ টাকা দেন বাস কন্ডাক্টর। বলেন, “ওকে হাসাপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আয়, নাহলে মরে যাবে!” সবেমাত্র সেই রিক্সা নিয়ে স্ট্যান্ডে এসেছিলেন কার্তিক রাণা নামে ওই চালক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ঘটনা! তারপর, সকলেই একই কথা বলার পর নিয়ে যান ওই যুবককে। কিন্তু, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমারজেন্সি-তে হাজার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পড়াশোনা না জানা, গোবেচারা রিক্সা চালককে! কাগজপত্র দেখতে চান ডাক্তার বাবুরা। কিছুই দেখাতে না পেরে, কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে, সেই মুমূর্ষু যুবককে ফের এলআইসির মোড়েই ফেরত নিয়ে আসেন রিক্সাচালক কার্তিক। এরপর, আরও চার ঘণ্টা ওভাবেই কাতরাতে থাকেন যুবক! ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়। সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের তরফে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। খবর যায় স্বয়ং মহকুমাশাসকের কাছেও। যুবকের ফোন থেকেই খবর দেওয়া হয় তাঁর বাড়িতে অর্থাৎ গড়বেতা থানার পানিকোটরেও। সকাল থেকে এভাবেই প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর, সকাল এগারোটা নাগাদ এলআইসির মোড়ে পৌঁছন যুবকের বৃদ্ধ বাবা নীলমণি দে। এসে দেখেন, মৃতপ্রায় ছেলেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন। স্বয়ং মহকুমাশাসক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পুলিশকর্মীরা তখন তোড়জোড় করছেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বৃদ্ধ-কে দেখতে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন‌ সকলে! সমস্বরে বলে ওঠেন, “ওই তো বাড়ির লোক এসেছেন!” তবে, শেষ‌ রক্ষা হলো কই! দ্বিতীয়বার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন ধনঞ্জয় দে নামে বছর ৩৭-এর যুবককে! দীর্ঘ টানাপোড়েনে, বিনা চিকিৎসায় এভাবেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের।

thebengalpost.net
এভাবেই পড়ে ছিলেন প্রায় পাঁচ ঘন্টা:

বৃদ্ধ বাবা নীলমণি দে, বুকে কান্না চেপে রেখে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বলেন, “অসুস্থ ছিল। ডাক্তার দেখাতেই এসেছিল ‘সাগর’ নামে একটি বাসে চেপে। কেউ একজন ওর ফোন থেকেই বাড়িতে ফোন করে জানায় ও অসুস্থ বলে। আমি যখন পৌঁছই তখনও শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল, খুব ধীরে ধীরে! ঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে হয়তো….!” প্রায় ৫ ঘন্টা শহরের রাস্তাতেই পড়ে থেকে প্রাণ হারালেন বছর ৩৭-এর যুবক। যুবকের বাবা জানান, একটা সময় মদ্যপান করত ছেলে। লিভারের সমস্যা হয়েছিল। তাই নিজেই চিকিৎসা করাতে এসেছিল! তা সে যাই হোক, সঠিক কাগজপত্রের অভাবে একজন মুমূর্ষু রোগীকে ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল। এর দায় কার? মেদিনীপুর পৌরসভার পৌর প্রধান সৌমেন খান বলেন, “আমরা এই বিষয়টা জানতে পারিনি। যতক্ষণে জানতে পেরেছিলাম, ততক্ষণে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাসপাতাল প্রথমে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে এমন বিষয় জানা নেই।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানান, “বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই শুনলাম। কাগজপত্র না থাকলেও এখানে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা করা হয়, ভর্তি করা হয়। পুলিশ, প্রশাসন বা সচেতন কোনো নাগরিক সঠিকভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই ভর্তি নেওয়া হতো! আমি তবুও খোঁজ নিয়ে দেখব।”

thebengalpost.net
ঘটনাস্থলে পৌঁছন‌ মহকুমাশাসক:

thebengalpost.net
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয় যখন, তখন যুবক প্রায় মৃত: