মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ আগস্ট: প্রায় অর্ধশতাব্দী প্রাচীন ‘দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র সেতু’র (১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি উদ্বোধন করছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল এ.এল ডায়াস) স্বাস্থ্য সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বা আধিকারিকরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই তাই খুলে দেওয়া হচ্ছে বীরেন্দ্র সেতু (Birendra Setu)। সোমবার সকাল ৯-টা থেকেই শুরু হয়ে যাবে যান চলাচল। আজ, রবিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা নাগাদ থেকে এমনটাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে। এও জানানো হয়েছে, সোমবার রাত্রি ১১-টা পর্যন্ত লোড টেস্টিং এর কাজ চলার কথা থাকলেও, সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা সন্তুষ্ট হওয়ায়; সেই কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে সোমবার (২১ আগস্ট) সকাল ৮-টাতেই। সকাল ৯-টা থেকে আগের মতোই যানবাহন চলবে বীরেন্দ্র সেতুতে। তবে, বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, আপাতত সর্বাধিক ৮ টন ওজনের গাড়িই চলবে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে লোড টেস্টিংয়ের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এসে যাওয়ার পরে, ৮ টনের বেশি ওজনের মালবাহী গাড়ি বা ট্রাক চলাচলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে, ব্রিজের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ায়, সেই ‘ছাড়পত্র’ মিলতে পারে বলেই সূত্রের খবর।

thebengalpost.net
সোমবার সকাল থেকেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে বীরেন্দ্র সেতু:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, টানা কয়েক মাস (কয়েক বছর বললেও অত্যুক্তি হয় না) ধরে সংস্কারের কাজ চলার পর, গত ১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) গভীর রাত থেকে সমস্ত ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে (অ্যাম্বুল্যান্স বাদে) শুরু হয়েছিল সুপ্রাচীন এই সেতুর ভার বহন ক্ষমতা পরীক্ষা বা লোড টেস্টিং। সম্পূর্ণভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে, টানা প্রায় তিন দিন ধরে সেই কাজ চলার পর; রবিবার (২০ আগস্ট) দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের তরফে বীরেন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যাতেই সেই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের। তারপরই, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সোমবার সকাল ন’টা (9 am) থেকেই যানবাহন চলাচল করতে পারবে কংসাবতী নদীর উপর অবস্থিত, সড়কপথে মেদিনীপুর-খড়্গপুর সংযোগকারী বীরেন্দ্র সেতুর উপর দিয়ে। ফলে স্বস্তিতে আপামর জেলাবাসী থেকে শুরু করে জেলার বণিক মহল।

অন্যদিকে, গত বছরই (২০২২) কংসাবতী নদীর উপর (৬০ নং জাতীয় সড়কে) ‘সুপ্রাচীন’ বীরেন্দ্র সেতুর ঠিক পাশেই নতুন একটি ব্রিজ তৈরির ছাড়পত্র মিলেছিল কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রকের তরফে। অবশেষে সেই ব্রিজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলতি বছরের পুজোর আগেই শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা। এমনকি ব্রিজের কাজ পুজোর ঠিক পরপরই শুরু হয়ে যাবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, নতুন এই ব্রিজ ও সংযোগকারী রাস্তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রকের তরফে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রে জানা গেছে। এই সেতু ছয় (Six lane) লেনের (প্রায় ৩২ মিটার চওড়া) হতে পারে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের শীর্ষ আধিকারিকরা জানিয়েছেন। তবে, ৬০ নং জাতীয় সড়কের উপর (অধুনা ১৪ নং জাতীয় সড়ক) চৌরঙ্গী থেকে মুর্শিদাবাদের মোরগ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটি চার লেনের (Four Lane) হবে বলে সূত্রের খবর। তবে, সেই কাজ নতুন ব্রিজ তৈরির পরই শুরু হবে। তার আগে পুরানো রাস্তাতেই মিশে যাবে নতুন ব্রিজ। সেক্ষত্রে আপাতত নতুন ব্রিজের উভয় পার্শ্বে (দু’দিকে) আনুমানিক ৪০০ মিটার করে নতুন রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা। বীরেন্দ্র সেতুর পাশে নতুন একটি ব্রিজের পাশাপাশি, গড়বেতার ধাদিকা ব্রিজের পাশেও নতুন একটি ব্রিজ তৈরি হবে এই একই সময়ে। এমনটাই জানা গেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে।

thebengalpost.net
পাশেই তৈরি হতে চলেছে নতুন ব্রিজ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বিধায়ক ও MKDA চেয়ারম্যান দীনেন রায়: