দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ আগস্ট: এ যেন উলট-পুরাণ! পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এবার হাইকোর্টে মামলা করলেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ী সদস্যরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৫ জন সদস্য কলকাতা হাইকোর্টে এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনা ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলা জুড়ে। ঘটনায় দলের গোষ্ঠী কোন্দোলকেই দায়ী করছেন শাসকদলের একাংশ। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করায় জয়ী সদস্যদের উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ রাজ্য নেতৃত্ব। দলগতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ২৭-টি আসনের মধ্যে ২৩-টি আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে ঘাসফুল শিবির। যদিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কে হবে তা নিয়ে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। গত ১০ আগস্ট বিডিও-র ডাকা কোরামে জয়ী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও দীর্ঘ সাত ঘন্টাতেও বোর্ড গঠন হয়নি। এদিকে, বোর্ড গঠন না হওয়ার দায় প্রশাসনের আধিকারিকদের উপর ঠেলে কেশিয়াড়ি থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (IC), স্থানীয় বিডিও (BDO), এসডিও (SDO), জেলাশাসক (DM) ও জেলা পুলিস সুপারের (SP) বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন মোট ১৫ জন জয়ী সদস্য। মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন কার্তিক পালুই, ফটিক রঞ্জন পাহাড়ি, মঙ্গল মুর্মু, শান্তনু মাইতি, রামপদ সিং প্রমুখ।
মামলাকারীদের অভিযোগ, গত ১০ আগস্ট বোর্ড গঠনের দিন বিডিও অফিসে উপস্থিত হন তৃণমূলের ২৩ জন জয়ী সদস্য। সেখানে আসেন কেশিয়াড়ি থানার আইসি। তিনি নির্দেশ দেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসাবে উত্তম শিটকে বেছে নিতে হবে। মামলাকারীদের দাবি, আইসির নির্দেশের সঙ্গে সহমত ছিলেন না অনেকেই। এরপর বিডিও-র ডাকা কোরামে উপস্থিত হন ২৩ জন সদস্যই। বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে, সভাপতি হিসেবে ফটিক রঞ্জন পাহাড়ির নাম লিখিত আকারে প্রস্তাব করেন মঙ্গল মুর্মু। প্রস্তাবে সমর্থন করেন কার্তিক পালুই। একইভাবে সভায় উত্তম শিটের নামও প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়। মামলাকারীদের অভিযোগ, যেখানে দুটি নাম প্রস্তাব হয়েছে, সেখানে বিডিও-র উচিত ছিল পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ভোটাভুটির আয়োজন করা। যদিও, তিনি তা না করে কোরাম থেকে বেরিয়ে যান।
মামলাকারীদের দাবি, বিষয়টি তাঁরা জেলাশাসক ও জেলার পুলিস সুপারের কাছেও তুলে ধরেন। যদিও তাঁরা কোন পদক্ষেপ না করায়, জনস্বার্থ মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন। মামলাকারীদের কেউ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তাঁদের আইনজীবী সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, একজন পুলিস আধিকারিক কীভাবে এ ধরণের কাজ করতে পারেন? এক্ষেত্রে পঞ্চায়েত আইনও লঙ্ঘন করেছেন বিডিও। মামলার শুনানি রয়েছে আগামী ২২ আগস্ট। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণে ফটিক পাহাড়িকে ইতিমধ্যেই দল থেকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “ফটিককে আমরা ইতিমধ্যেই দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। বাকিদের হয়তো ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর, প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা, সেটা প্রশাসন ঠিক বুঝে নেবে। এরকম বহু মামলা হয়েছে রাজ্য সরকার তথা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে, যাঁরা দলকে বা আমাদের সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”