দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুলাই: হেরে গিয়েও জয়ী হলেন প্রণতি! ‘দ্বাদশ’ হয়েও পশ্চিম মেদিনীপুর তথা পশ্চিমবঙ্গ বাসীর “প্রাণের পদক” জিতে নিলেন। দীপা হতে না পারলেও, লড়াইয়ের প্রদীপ জ্বালাতে সক্ষম হলেন, মাত্র ৮০ দিনের প্রশিক্ষণেই! শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক্সের দরজা খুলে গিয়েছিল তাঁর কাছে। হাতে প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় ছিল না! মাত্র দু’মাসের প্রস্তুতিতেই টোকিও অলিম্পিক্সে গিয়েছিলেন প্রত্যন্ত পিংলার মেয়ে প্রণতি নায়েক। সেখানে সাধ্যমতো লড়াই করলেন। কিন্তু, ফাইনাল রাউন্ডে উঠতে পারলেন না তিনি! যোগ্যতা অর্জন পর্বে শেষ করলেন দ্বাদশ স্থানে। রবিবার সকালে, মহিলাদের আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের যোগ্যতা অর্জন পর্বে নেমেছিলেন প্রণতি। সেখানে অলরাউন্ড পর্বে তাঁর স্কোর ৪২.৫৬৫। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছেন ভল্টে (১৩.৪৬৬)। এ ছাড়া ফ্লোরে ১০.৬৩৩, আনইভেন বারে ৯.০৩৩ এবং ব্যালান্স বিমে ৯.৪৩৩ পয়েন্ট পেয়েছেন তিনি। প্রাণ বাজি রেখে, নিজের সবটুকু দিয়েও পারলেন না! আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকের যাত্রা আপাততো শেষ করলেন বঙ্গতনয়া তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের গর্ব প্রণতি।

thebengalpost.in
দ্বাদশ হয়ে শেষ করলেন প্রণতি নায়েক :

thebengalpost.in
মূল পর্বে উঠতে পারলেন না প্রণতি :

প্রসঙ্গত, মেদিনীপুরের পিংলার এই মেয়ে অতিমারির সময়ে কার্যত কোনও অনুশীলনই করতে পারেননি। নিজেকে ফিট রাখার জন্য বিভিন্ন কসরত করেছেন ঠিকই, কিন্তু জিমন্যাস্টিক্সে উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় যে প্রশিক্ষণ সেটাই পাননি তিনি। মে মাসে আচমকাই মহাদেশীয় কোটায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রণতির কাছে অলিম্পিক্সের টিকিট চলে আসে। তারপর থেকে কোচ লখন শর্মার অধীনে অনুশীলন করতে থাকেন। কিন্তু, অলিম্পিক্স দোরগোড়ায় থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনুশীলন থেকে বিরত ছিলেন তাঁরা। তাই, প্রণতির এই লড়াই মনে রাখবে পিংলা, পশ্চিম মেদিনীপুর তথা সারা বাংলা ও ভারত। এদিকে, গতকাল রাত থেকেই গ্রামের মেয়ের মঙ্গল কামনায় রাত জেগেছিল গোটা করকাই গ্রাম। তাঁদের চোখে জল, তবে সেই জল দুঃখের নয়, ভালোবাসা, স্নেহ ও শ্রদ্ধা’র! উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের প্রত্যন্ত করকাই চককৃষ্ণদাস গ্রামে ১৯৯৫ সালে জন্ম প্রণতি নায়েকের। ছোট বেলা থেকেই দুরন্ত। বাবা শ্রীমন্ত নায়েক বাস চালক। বর্তমানে লকডাউনে গাড়ি না চলায় বাড়িতেই রয়েছেন। মাঝে মধ্যে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেন। বা কেউ কোথাও ছোট গাড়ি চালানোর জন্য ডাকলে যান। মা প্রতিমা নায়েক সাধারণ গৃহবধূ। প্রণতির বাবা শ্রীমন্ত নায়েকের কথায়, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই জিমন্যাস্টিকে আগ্রহ। একবার স্কুল ক্রিড়ায় জেলা স্তরে প্রথম স্থান অর্জন করার পর রাজ্যেও প্রথম হয়। তখন শুভাশিস চক্রবর্তী নামে গ্রামের একজন প্রশিক্ষণ দিতেন। গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর কলকাতার সুকান্তনগর স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করি। ‘সাই’ এর কোচ মিনারা বেগমের কাছে জিমন্যাস্টিক শেখার জন্য ভর্তি করি। তারপর চন্ডীগড়ে ন্যাশনাল চাম্পিয়ানশিপে সাফল্য জিনিয়ে আনে। এরপর থেকে একের পর এক সাফল্য আসে প্রণতির। তিনি বলেন, অলিম্পিক্সে সুযোগ পাওয়ার খবরে গর্বিত গোটা গ্রাম, গোটা বাংলা, গোটা ভারতবর্ষ। আমাদের বিশ্বাস সাফল্য পাবেই প্রণতি।” শনিবার গ্রামের চণ্ডী মন্দিরে বসে প্রণতির মা প্রতিমা নায়েক জানিয়েছেন, “আমার তিন মেয়ের মধ্যে মেজ মেয়ে প্রণতি ছোট থেকেই দুরন্ত। ওর মামা-মামীরা ভর্তি করে দিয়েছিল জিমন্যাস্টিক্সে। আজ এত দূরে পৌঁছতে পেরেছে মেয়ে, গর্বতো আমাদের হবেই। তিনি বলেন, সকালে টোকিও থেকে ভিডিও কল করেছিল মেয়ে। সেখানকার কীসুন্দর পরিবেশ। আমাদের দেখাল। বলল, ‘মা এখানের খাবার খেতে একটু সমস্যা হচ্ছে, বাকি সব ঠিক আছে। তোমরা একদম চিন্তা কোরো না। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব। পদক জিতে দেশের মুখ রক্ষা করব। তোমাদের মুখ রক্ষা হবে’।” হ্যাঁ, আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন প্রণতি! আপাতত, দ্বাদ্বশ হয়েই শেষ করতে হল তাঁকে। তবে, পিংলার এই ‘দস্যি’ মেয়ের বুকের ভেতর যে পরবর্তী লড়াইয়ের দীপ জ্বলতেই থাকবে, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.in
চেষ্টা করেছিলেন আপ্রাণ :

thebengalpost.in
আপাতত বিদায় :