তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর ২৭ ফেব্রুয়ারি: গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে শাসক দলের দুই নেতার মধ্যে লড়াই! উত্তেজনা। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হল পুলিশকে। দু’জনেরই দাবি নাকি তাঁদের পছন্দমতো ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে হবে। তৃণমূলের দুই নেতার অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে সরগরম গোটা এলাকা। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার বান্দিপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যেতে হয় চন্দ্রকোনা থানার পুলিশকে। এদিকে, তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে শাসকদলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যর এই দ্বন্দ্বকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলের নেতারা।
জানা যায়, সোমবার চন্দ্রকোনা-২ নং ব্লকের বান্দিপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়ে পঞ্চায়েতের কাজের জন্য কন্ট্রাক্টর বা ঠিকাদারদের টেন্ডার জমা নেওয়া হচ্ছিল। আর, এই টেন্ডার জমা নেওয়াকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। এমনই অভিযোগ পেয়ে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়ে যেতে হয় চন্দ্রকোনা থানার পুলিশকে। টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় নাম জড়ায় শাসকদলের চন্দ্রকোনা ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ ও বান্দিপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নীলকমল পন্ডিতের। তাঁরা নিজেদের পছন্দ মতো কন্ট্রাক্টরদের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন একে অপরের বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েত সদস্য নীলকমল পন্ডিত প্রশ্ন তোলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাঁর অফিস ছেড়ে দিয়ে আজ গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়ে বসে কি করছেন? আজ তো টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হার্ড কপি জমা দেওয়ার তারিখ।” পঞ্চায়েত সদস্য অভিযোগ করেন, কয়েকজন কন্ট্রাক্টর টেন্ডারের হার্ড কপি জমা দিতে গেলে বাধা দেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ। এমনকি ওই কন্ট্রাক্টরদের বের করে দেওয়া হয় এবং মারধরও করা হয়। প্রধানকে ব্যবহার করে নিজে থেকে অশান্তি সৃষ্টি করছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। এমনই অভিযোগ পঞ্চায়েত সদস্য নীলকমল পন্ডিতের। যদিও, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ অভিযোগ করেন, “পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই গন্ডগোল বাঁধানো হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতেরই এক পঞ্চায়েত সদস্য নীলকমল পন্ডিত দু’জন কন্ট্রাক্টর বা ঠিকাদার নিয়ে আসেন তাঁদের টেন্ডার জমা দেওয়ার জন্য। ওদের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সদস্য কেনো এতো সচেষ্ট উনিই বলতে পারবেন। তবে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও কন্ট্রাক্টর আগের দেওয়া কাজ অসম্পূর্ণ রাখলে তাদের পুনরায় কাজ দেওয়া হবেনা তা আগেই সব কন্ট্রাক্টরদের ডেকে মিটিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর পঞ্চায়েত সদস্য যে দু’জন কন্ট্রাক্টরকে নিয়ে এসে অভিযোগ করছে ওই দু’জন তাঁদের দেওয়া আগের কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। আর, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসাবে আমি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়ের কাজ দেখভাল করতেই পারি।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সুরেই সুর মিলিয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান স্নিগ্ধা ঘোষ। টেন্ডার জমা নেওয়াকে কেন্দ্র করে শাসকদলেরই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যর দ্বন্দকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।চন্দ্রকোনার বিজেপি নেতা রাজীব পাল জানান, “সারা বাংলা জুড়েই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল লেগে রয়েছে। আসলে এসব নিজেদের মধ্যে কে কত বেশি কাটমানি খাবে তার টানাপোড়েন। সাধারণ মানুষ এদের জন্য ভুগছে। কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে থাকছে।”