দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ ডিসেম্বর: অবিভক্ত মেদিনীপুরের গর্ব! ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের প্রত্যন্ত রাঙাডিহা গ্রামের মমতা হাঁসদা। জাতীয় পর্যায়ে ইতিমধ্যে দাপিয়ে ফুটবল খেলেছেন। এবার, ভারতের মহিলা জাতীয় দলের জার্সি চাপিয়ে ময়দান কাঁপাবেন। কোচিতে অনুষ্ঠিত হতে চলা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে বছর ২০’র মমতা। বুধবার মমতা হাঁসদা সহ জঙ্গলমহলের চার মহিলা ফুটবলারকে সম্বর্ধনা জানাল মেদিনীপুর শহরের তরুণ সংঘ ব্যায়ামাগার। এঁরা প্রত্যেকেই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এদিন সাঁকরাইলের মমতা হাঁসদা, মমতা সিং, মুগলি সরেন , গুরুবারী মান্ডি এবং তাঁদের কোচ অশোক সিং-কে সম্বর্ধনা জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন, ক্লাবের সভাপতি উদয় রঞ্জন পাল, সম্পাদক তপন ভকত, গোপাল সাহা, শান্তনু চক্রবর্তী প্রমুখ।

thebengalpost.net
সংবর্ধনা দিল তরুণ সংঘ ব্যায়ামাগার :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মমতার এই উত্থান সহজ ছিল না! দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের দিন আনা দিন খাওয়া জীবন। নিত্য অভাবের সঙ্গেই ছিল অনুপযুক্ত পরিবেশ। মাঠ নেই, প্রশিক্ষক নেই, আর টাকা পয়সার অভাব তো ছিলই! মমতার বাবা প্রয়াত হয়েছেন আগেই। মা, দাদা, দুই দিদি আছে। সবচেয়ে ছোট মমতা। সামান্য জমিতে চাষবাস আর দিনমজুরি করে চলে সংসার। তবে, সবকিছু উপেক্ষা করেই মমতা এগিয়ে গেছেন। মমতার কোচ অশোক সিংহ বলেন, “আমার ছাত্রী জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়ায় গর্ব বোধ করছি। আমার বিশ্বাস ছিল কোন না কোন দিন আমাদের এলাকার মেয়েরা সুযোগ পাবে। ভারতের হয়ে খেলবে”। তাঁর কথায়, জঙ্গলমহলের মেয়েদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে। কিন্তু, এখানে কোনও ভালো মাঠ নেই, সুযোগ-সুবিধা নেই। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে জঙ্গলের মধ্যেই প্রশিক্ষণ দিতে হয়। কোচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মমতা’ও। তাঁর কথায়, “অশোক স্যার না থাকলে আমার ফুটবল খেলাটাই হতো না”! জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে মমতা জানান, “দেশের জার্সি পরে খেলব তাতে খুব খুশি আমি। বাংলার নাম উজ্জ্বল করব এটাই লক্ষ্য। পরিবারের সহযোগিতাতো ছিলই পাশাপাশি আমাদের কোচ অশোক সিংহ-র অবদান অনস্বীকার্য।”

thebengalpost.net
ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে সংবর্ধিত ফুটবলাররা :

উল্লেখ্য যে, ২০১১ সাল থেকে ফুটবলের প্রশিক্ষণ শুরু হয় মমতার। কিন্তু, অসুস্থতার জন্য একটানা প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি! অদম্য জেদের জন্য ফের ফিরে আসেন মাঠে। এরপর ২০১৪ সালে স্কুল দলের হয়ে দিল্লিতে সুব্রত কাপ খেলতে যায় মমতা। ২০১৫ সালে তাঁর দল জঙ্গলমহল কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয় মমতা হাঁসদা। এরপর আর ফিরে তাঁকাতে হয়নি। ২০১৫-‘১৬ সালে কল্যানীতে সিনিয়রদের জাতীয় প্রতিযোগিতায় ফুটবল খেলেন। তারপর গোয়ায় ২০১৬-১৭ সালে অনূর্ধ্ব- ১৯ স্কুল দলের হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে যান। ২০২০ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে কন্যাশ্রী কাপে রানার্স। তাঁর খেলা নজর কাড়ে জাতীয় নির্বাচকদের। ফলে কাঙ্খিত সুযোগ আসে মমতার কাছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন ‘জঙ্গলকন্যা’ মমতা হাঁসদা। প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য যে, এবারই অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের তিলাখুলির মৌসুমী মুর্মু। কষ্টার্জিত ছিল তাঁর উত্থানও। স্বভাবতই, মৌসুমী-মমতাদের জন্য গর্বে বুক ভরে ওঠে অবিভক্ত মেদিনীপুরের!

thebengalpost.net
ফুটবল পায়ে মমতা (ছবি- সংগৃহীত) :