দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: “আমি বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চাই। আর, একটা স্কুলও খুলতে চাই। যেখানে বিনামূল্যে বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারবে।” SMA বা স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রপি (Spinal muscular atrophy)-র মতো অতি-বিরল স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত মেদিনীপুর শহরের ছোট্ট রূপসা’র দু’চোখে এমনই স্বপ্ন। তবে, সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা জানেনা রূপসা। বাবা-মা’র দু’চোখে শুধুই জল! কারণ, রূপসা-কে নিয়ে যে জীবনযুদ্ধে তাঁরা সামিল হয়েছেন, সে লড়াই ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। রূপসা-কে সুস্থ করে তুলতে লাগবে কোটি টাকার ইঞ্জেকশন। মাসে ওষুধের প্রয়োজন ১৭-২০ লক্ষ টাকার। তবে, সেই চিকিৎসা এদেশে এখনও শুরু হয়নি। আপাতত, ভারত সরকারের সহায়তায় ব্যাঙ্গালোরে থেকে কিছু ওষুধপত্র নিয়ে আসতে হয় রূপসার মতো SMA আক্রান্ত শিশুদের। মাঝেমধ্যে দেওয়া হয় একটি ইঞ্জেকশনও।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন:

প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বল্লভপুর লেনের বাসিন্দা সৌমেন মুখার্জি ও শান্ত্বনা মুখার্জির একমাত্র মেয়ে রূপসা। সৌমেন একটি ছোটোখাটো সংস্থার কর্মী। শান্ত্বনা গৃহবধূ। রূপসার যখন ২ বছর বয়স, তখনই তার শরীরে এই বিরল রোগ এসএমএ (Spinal Muscular Atrophy) ধরা পড়ে। শুধুই বিরল নয়, এই রোগকে অতি-বিরল বললেও ভুল হয় না! সারা দেশে মাত্র ৪০০-৫০০ জন এই রোগে আক্রান্ত। এরাজ্যে ৪০-৫০ জন। জেনেটিক ডিস-অর্ডারের ফলে এই রোগ হয়। শরীরে একবার বাসা বাঁধলে, সে কখনো উঠে দাঁড়াতে পারেনা। সারা জীবন শুয়ে-বসেই কাটাতে হয়। স্পাইনাল কর্ড বেঁকে গিয়ে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে প্রায় গোটা শরীর! রূপসার শরীরে এই রোগ ধরা পড়ার পরই ভেঙে পড়েন মেদিনীপুর শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই দম্পতি। রূপসা বয়স এখন ৮। মেদিনীপুর শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। যদিও, সহজে কোনো স্কুলে ভর্তি নিতে চায়নি তাকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের তৎকালীন DPSC চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষইয়ের তৎপরতায় গত বছর (২০২২) রূপসা-কে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই সময় রূপসাকে একটি হুইল চেয়ার উপহারও দিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু। ফের রূপসার প্রয়োজন একটি অত্যাধুনিক হুইল চেয়ারের। যার দাম আনুমানিক ৪০-৫০ হাজার টাকা। মেয়ের জন্য প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া দম্পতি কাতর আবেদন জানিয়েছেন, যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা সহৃদয় মানুষের পক্ষ থেকে রূপসার হাতে এই হুইল চেয়ারটি তুলে দেওয়া হয়!

thebengalpost.net
রূপসা :

ছোট্ট রূপসা’র পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে। যদিও, পড়তে বা লিখতে পারেনা। ছবি আঁকতে আর আবৃত্তি করতে খুব ভালোবাসে। এখন সারাদিন কবিতা আর রিলস নিয়েই সময় কাটায় রূপসা। মা শান্ত্বনা ওরফে সাথী সঙ্গ দেন রূপসা-কে। মনে দুঃখ চেপে রেখে, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তার মজাদার সমস্ত রিলস সোশ্যাল সাইটে আপলোড করে দেন তিনি। ছোট্ট রূপসা’র ইতিমধ্যে অনেক ফলোয়ারও হয়েছে। মোবাইলে পারদর্শী রূপসা নিজেই ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ নানা ধরনের অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। রূপসার ইচ্ছে একজন ভালো শিক্ষিকা হওয়া এবং ভবিষ্যতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু, তার সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা বিরল SMA। যার সঙ্গে লড়াই করতে লাগবে কোটি কোটি টাকা!

thebengalpost.net
২০২২ সালের মার্চ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর DPSC-তে রূপসা :