মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ অক্টোবর: দূষণহীন বা পরিবেশ-বান্ধব যান হিসেবে ইলেকট্রিক গাড়ি বা ব্যাটারিচালিত গাড়ি’র ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বাজারেও ক্রমশ তা পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ির বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করছে! এই ই-কার বা ইলেকট্রিক গাড়িকে আরও উন্নত ও গতিশীল করতে দেশ-বিদেশের যে সমস্ত বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যেই অন্যতম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনের ‘ভূমিপুত্র’ সুমন্ত সাহু। রিচার্জেবল ব্যাটারির গতানুগতিক ক্যাপাসিটরের তুলনায় ‘সুপার ক্যাপাসিটর’ (Supercapacitor) অনেক দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে। সেই সুপার ক্যাপাসিটর ব্যাটারির ‘ইলেকট্রোড’ (Electrode) নির্মাণে নিমগ্ন সুমন্ত গত বছরের (২০২২) মতো এবারও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি (Stanford University) প্রকাশিত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। এমনকি গত বছরের (২০২২) তুলনায় র্যাঙ্কিং- এও এবার (২০২৩) অনেকটাই এগিয়েছেন বছর ৩৬-র এই তরুণ বিজ্ঞানী।
মোগলমারি খ্যাত ঐতিহাসিক দাঁতনের রায়বাড় (উত্তর) গ্রামের বাসিন্দা সুমন্ত ২০১৩ সালে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ (Post-Doctoral Fellowship) করার পর দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)-র একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে (Yeungnam University) ‘আন্তর্জাতিক গবেষক’ রূপে নিযুক্ত আছেন। সুমন্ত-র ‘স্বপ্নের দৌড়’ অবশ্য শুরু হয়েছিল জন্মস্থান দাঁতন থেকেই। দাঁতন উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল! সেখান থেকে, বাংলা তথা দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)-এ রসায়ন নিয়ে সাম্মানিক স্নাতক (Honours in Chemistry)। এরপর, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (Master of Science in Inorganic Chemistry) এবং পরবর্তী সময়ে আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) থেকে গবেষণা (Ph. D) করেন। সুমন্ত’র বাবা শ্রীকান্ত সাহু দাঁতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। মা অমিতা সাহু গৃহবধূ। ‘মেদিনীপুরের গর্ব’ সুমন্ত এবারও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা করে নেওয়ায় উচ্ছ্বসিত পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে আপামর দাঁতন তথা মেদিনীপুরবাসী।
উল্লেখ্য যে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ইতিমধ্যে সুমন্ত-র ৯০-টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এখনও অবধি ৩-টি বই সম্পাদনা ও ৪-টি বইয়ের চ্যাপ্টারও লিখে ফেলেছেন সুমন্ত। ২০২১ সালে Yeungnam University-তে অনুষ্ঠিত ২১-তম ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম অন ক্লিন টেকনোলজি (21st International Symposiums on Clean Technology) এ সুমন্ত’র একটি গবেষণাপত্র ‘Best Poster Award’ পায়। এই মুহূর্তে সুপার ক্যাপাসিটর ছাড়াও Li-ion ব্যাটারি এবং Na-ion ব্যাটারি নিয়েও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানী সুমন্ত সাহু। সুমন্ত জানান, “পরিবেশের স্বার্থে তথা দূষণ কমানোর জন্য ই-কারের ভূমিকা অপরিসীম। তবে, সমস্ত দিক দিয়েই পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ির বিকল্প হিসেবে এই ইলেকট্রিক গাড়িকে আরও উন্নত ও আধুনিক রূপ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”