দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ নভেম্বর: সবে পুজোর ছুটি কাটিয়ে আজ (মঙ্গলবার) থেকে কলেজের পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। আর, প্রথম দিনই রক্তারক্তি কান্ড পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর কলেজে। অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত অন্তত ৬ জন। তাদের পাঠানো হয়েছে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। গুরুতর জখম ৩ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছে। কলেজের বর্তমান ছাত্র এবং অধ্যক্ষের দাবি, বহিরাগতদের হামলায় বর্তমান ছাত্ররা আহত হয়েছেন! যদিও, জখম পড়ুয়াদের দাবি, অধ্যক্ষের ইন্ধনেই কলেজের প্রাক্তন টিএমসিপি কর্মীরা তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে। অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে প্রাক্তন পড়ুয়া তথা প্রাক্তন ছাত্র সংসদের নেতারা দুর্নীতি করছে বলে দাবি জখম পড়ুয়াদের। আর, তার প্রতিবাদ করতে গিয়েই মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের মার খেতে হয়েছে বলে দাবি বর্তমান পড়ুয়াদের। এ নিয়ে যদিও ‘বর্তমান’ এবং ‘বহিরাগত’ পড়ুয়াদের দুটি গোষ্ঠীর দুটি মত উঠে আসছে!
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কলেজ খোলার পর কলেজে ঢুকে বহিরাগত কিছু যুবক প্রিন্সিপালের রুমের সামনে ঘোরাঘুরি করছিল। একসময় কলেজে সক্রিয়ভাবে তারা টিএমসিপি করত বলে জানা যায়। সদ্য প্রাক্তন হয়ে গেলেও কেশপুর কলেজের বর্তমান ইউনিটের বিভিন্ন পদেও এখনও তারাই আছে বলে জানা যায়। তারা কেশপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি আসিফ ইকবাল গোষ্ঠীর বলে অভিযোগ। কলেজে তাদের দেখার পরই অপর একটি গোষ্ঠীর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরাও পৌঁছয় কলেজে। তারা বিধায়ক শিউলি সাহা এবং ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদ্যোৎ পাঁজা গোষ্ঠীর বলে জানা যায়। এরপর, দুই গোষ্ঠীর পড়ুয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। শুরু হয় ব্যাট, উইকেট, বাঁশ দিয়ে মারামারি! আহত ও রক্তাক্ত হন ৬ জন। ৩ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যালে সেলাইন হাতে দাঁড়িয়ে জখম এক পড়ুয়া জামির খান বললেন, “প্রিন্সিপালের ইন্ধনে আজ বহিরাগত পড়ুয়ারা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি আশিক ইকবাল-এর সঙ্গে প্রিন্সিপাল যুক্ত হয়ে কলেজে একাধিক দুর্নীতিমূলক কাজ চালাচ্ছে। আমরা তার প্রতিবাদ করাতেই আজ মার খেতে হল। বিধায়ক শিউলি সাহা ও ব্লক তৃণমূল সভাপতি আমাদের পাশে আছেন। তাঁদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, অবিলম্বে কলেজ থেকে দুর্নীতির আখড়া উৎখাত করার জন্য। আর, কলেজকে বাঁচানোর জন্য।” যদিও, এই অভিযোগ আশিক ইকবাল-এর তরফে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন অর্থাৎ বুধবার সকালে তিনি বেঙ্গল পোস্ট-কে জানিয়েছেন, “শেষ ৭ বছর ধরে কেশপুর পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে আছেন মন্ত্রী শিউলি সাহা। আমি কেশপুর পরিচালন সমিতিতেও নেই, আর কেশপুর কলেজের কোন কমিটিতেও নেই। তাই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন!” তাঁর গোষ্ঠীরই বর্তমান (পঞ্চম সেমিস্টার) এক ছাত্র তথা বর্তমান ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ মীর আব্দুল রহিম জানিয়েছেন, “কলেজের ইউনিট প্রেসিডেন্ট শেখ আবু বেলাল হোসেনের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে বহিষ্কৃত টিএমসিপি নেতা শেখ সানাউল্লা’র ভাই শেখ আব্দুল্লা ও তার দলবল। তাতেই সংঘর্ষ বাধে।” তারা মদ্যপ ছিল বলে অভিযোগ রহিমের। অন্যদিকে, বর্তমান পড়ুয়াদের অপর গোষ্ঠীর জামির খান-দের অভিযোগ, “প্রাক্তন ছাত্র হয়ে গেলেও এখনও ইউনিট প্রেসিডেন্ট থেকে শেখ আবু বেলাল কলেজে নিজের প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি করতে ব্যস্ত। এর প্রতিবাদ করায়, তার নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।”
অন্যদিকে, বিরোধীরা বিষয়টিকে শাসকদলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব বলেই কটাক্ষ করেছেন। এদিকে, কলেজের অধ্যক্ষ দীপক কুমার ভুঁইয়া জানিয়েছেন, বহিরাগত (প্রাক্তন) কিছু ছাত্রের সঙ্গে বর্তমান ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিধায়ক শিউলি সাহা জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক রং না দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” অন্যদিকে, বুধবার কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ পিকেট চেয়ে জেলা পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. দীপক কুমার ভুঁইয়া। চিঠিতে তাঁর আবেদন, ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে পুলিশ পিকেট বসানো হোক। এদিকে, ঘটনা ঘিরে এখনও থমথমে পরিবেশ কলেজ ক্যাম্পাসে!