দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ অক্টোবর: প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা তথা (অবিভক্ত) মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি হরেকৃষ্ণ সামন্ত শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাত্রি ৮টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পূর্ব মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তাঁর মৃত্যু-সংবাদে সবং তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। শোক প্রকাশ করেন সিপিআইএমের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বরাও। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ সিপিআইএমের প্রাক্তন রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরেকৃষ্ণ সামন্ত-র দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুর শহরের মীরবাজারে অবস্থিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিআইএমের কার্যালয়ে। তারপর অর্ধনমিত পতাকা হাতে নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল সহযোগে দেহ নিয়ে পৌঁছন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি হরেকৃষ্ণ সামন্ত-র অঙ্গীকার অনুযায়ী তাঁর দেহ তুলে দেওয়া হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের হাতে।
বেলা ১২টা নাগাদ সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রয়াত এই নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ, প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপক সরকার, তরুণ রায়, রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা সহ অন্যান্যরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন সবংয়ের বাসিন্দা, প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি হরেকৃষ্ণ সামন্ত। তবে, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল-ই ছীল। শনিবার ভোর রাতে হঠাৎই তীব্র অসুস্থতা বোধ করেন অশীতিপর এই সিপিআইএম নেতা। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পথে শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় কোলাঘাটের আগেই মেছোগ্রাম মোড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় সাড়া দিলেও, শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর, রাত্রি ৮টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জেলার কৃষক আন্দোলনের অন্যতম বরিষ্ঠ এই বাম নেতা!
উল্লেখ্য যে, কলেজ জীবনে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার সময়ই ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ‘সবংয়ের ভূমিপুত্র’ হরেকৃষ্ণ সামন্ত। পেশায় ‘শিক্ষক’ হরেকৃষ্ণ সবং জুড়ে শিক্ষকমশাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জেলার কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব হয়ে ওঠেন। সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৮ সালে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় এই সিপিআইএম নেতা। এরপর, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল অবধি। তবে, কৃষক আন্দোলনই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। স্বশাসিত মেদিনীপুর পরিকল্পনা পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন হরেকৃষ্ণ সামন্ত। তাঁর প্রয়াণে জেলার বাম আন্দোলনের একটা যুগ শেষ হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।