দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ জুলাই: প্রতারণার জাল বিছানো সর্বত্র! ভুয়ো চাকরির রমরমা। যেকোনো মুহূর্তে ফেঁসে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা জলে ফেলতে হতে পারে। তা সে SSC, প্রাইমারি হোক কিংবা দমকল, স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এনভিএফ (NVF) নিয়োগ। এই এনভিএফ নিয়োগ নিয়েই এখন বড়সড় দালাল চক্রের খোঁজ মিলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। মাত্র ৭ দিন আগে খোদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছিলেন, তাঁর সই জাল করে ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দাখিল করা হয়েছে তাঁরই দপ্তরে! তিনি দিলীপ নায়েক নামে ওই ব্যক্তির ‘ভুয়ো সার্টিফিকেট’ সহ লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এক সপ্তাহের মাথায় ফের উঠে এলো আরও এক বিস্ফোরক অভিযোগ। মৃত এক NVF কর্মীকে ‘নকল বাবা’ সাজিয়ে এক যুবকের চাকরি করে দেওয়ার জন্য ৩ লক্ষ টাকায় রফা হয়েছিল দুই দালালের সঙ্গে।‌ পুলিশ ভেরিফিকেশনে ধরা পড়ে যায় কেশিয়াড়ির ওই অভিযুক্ত যুবক তথা বছর ২৮-এর চাকরিপ্রার্থী উজ্জ্বল মাইতি। পুলিশ তাঁকে এবং জিতেন ঘোষ ও গোবিন্দ চক্রবর্তী নামে দুই দালালকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার তাঁদের মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে, ৩ জনকেই পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

thebengalpost.net
গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এনভিএফ চাকরির ক্ষেত্রে, কর্মরত যদি নিজেকে আনফিট প্রমাণ করতে পারেন অথবা তিনি কর্মরত অবস্থায় মারা যান, তবে তাঁর পোষ্য (ছেলে-মেয়ে বা নিকটাত্মীয়) সেই চাকরি পেয়ে থাকেন নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী। রবিবার ধরা পড়ে যাওয়া ঘটনায়, মৃত এনভিএফ কর্মী তথা আত্মীয়ের ‘ডাইং হারনেস’-এর চাকরি হাতাতে তাঁকে ‘বাবা’ সাজানো হয়েছিল কেশিয়াড়ির যুবক উজ্জ্বল মাইতি’র। মৃত এনভিএফ কর্মীর ছেলে হিসেবে যাবতীয় ভুয়ো তথ্য সাবমিটও করে দেওয়া হয়েছিল বোর্ডে। চাকরিও প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল! বাধ সাধলো শেষ মুহূর্তে পুলিশের স্পট ভেরিফিকেশন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আবেদনপত্রে উজ্জ্বল মাইতি দেখিয়েছিলেন, তাঁর বাবা নারায়ণ মাইতি এনভিএফ (NVF) কর্মী ছিলেন। মারা গিয়েছেন কর্মরত অবস্থায়। তাই, আইন অনুযায়ী সেই চাকরির উত্তরাধিকারী তিনি। আবেদনপত্র অনুসারে চাকরির ভেরিফিকেশন শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরপর, মেদিনীপুর থেকে পুলিশ আধিকারিকরা স্পট ভেরিফিকেশন করতে গিয়েই জানতে পারেন আবেদনকারী যুবক উজ্জ্বল মাইতির বাবা অন্যজন। তাঁর নাম প্রবীর মাইতি। তিনিও মৃত। তবে, তিনি এনভিএফ কর্মী ছিলেন না! অপরদিকে, মৃত NVF কর্মী নারায়ণ মাইতি উজ্জ্বলের এক আত্মীয়। এই নারায়ণ মাইতি-কেই বাবা সাজিয়ে আধার, ভোটার সহ যাবতীয় ডকুমেন্টস তৈরি হয়ে গিয়েছিল! এরপরই, বোর্ডের নির্দেশে ডি আই বি’র পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের হয় মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানায়। সেই মতো পুলিশ তদন্ত নেমে চাকরিপ্রার্থী যুবক উজ্জ্বল মাইতি এবং জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ, গোবিন্দ প্রসাদ চক্রবর্তী নামে দালালচক্রের দুই পান্ডাকে গ্রেফতার করে।

রবিবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী বানীকান্ত ভট্টাচার্য বলেন, “উজ্জ্বল মাইতির বিরুদ্ধে ডিআইবির পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তারই তদন্ত নেমে কোতোয়ালি পুলিশ এই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কাগজপত্র নকল সাবমিট করে চাকরির চেষ্টা করা হয়েছিল।” তবে, এই ঘটনায় এনভিএফ চাকরিতে দালাল চক্রের তথ্য সামনে উঠে এসেছে। ধৃত জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ এনভিএফ অ্যাসোসিয়েশনের পদে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পদে থাকার সুবাদেই এই জাল চাকরির চক্র তৈরি করেছেন কিনা তা তদন্ত করছে পুলিশ। মেদিনীপুর আদালতে এদিন জীতেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন, সাংগঠনিক শত্রুতার জেরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁদের নাম জড়ানো হয়েছে। তবে, উজ্জ্বলের ভাই ও মা জানিয়েছেন, প্রায় তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে মেদিনীপুরের জিতেন্দ্রনাথের সঙ্গে চাকরির রফা হয়েছিল। ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি দেওয়াও হয়ে গিয়েছিল। তবে, কিভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না! অন্যদিকে, ভুয়ো তথ্য দেওয়ার অপরাধে দুই প্রতারক সহ চাকরিপ্রার্থী উজ্জ্বল-কেও গ্রেফতার করেছে মেদিনীপুরে কোতোয়ালি থানা। তিনজনকে তিনদিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

thebengalpost.net
অভিযুক্তদের তিনদিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে কোতোয়ালি থানা :