thebengalpost.net
মৃত দ্বারিকেশ পট্টনায়েক (ছবি- পরিবার সূত্রে):

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ জুন: বুধবার ভোর রাতে কুয়েত (Kuwait)-এর একটি বহুতল আবাসনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৪২ জন (মতান্তরে ৪৫) ভারতীয়ের তালিকায় আছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাত্র এক জনই। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা। মৃত ব্যক্তির নাম দ্বারিকেশ পট্টনায়েক (৫২)। আদতে তিনি দাঁতন থানার তুরকা অঞ্চলের খন্ডরুইয়ের বাসিন্দা হলেও, গত কয়েক বছর আগে মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীতে বাড়ি করেছেন। মেদিনীপুর শহরের সেই বাড়িতেই থাকেন স্ত্রী অন্তরা (পট্টনায়েক) এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত একমাত্র মেয়ে ঐশী (পট্টনায়েক)। দ্বারিকেশের শ্বশুরমশাই কমলাকান্ত পট্টনায়েক আবার তুরকা অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর নাগাদ শোক-সংবাদ এসে পৌঁছয় পশ্চিম মেদিনীপুরে। তারপর থেকেই সব হারানোর হাহাকার দুই বাড়িতেই!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরের বাড়ি:

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৮ বছর আগে কর্মসূত্রে প্রথমে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন দ্বারিকেশ। সেখান থেকে বাহরিন এবং পরে কুয়েত। কুয়েতেই গত ২০ বছর ধরে একটি সংস্থায় কাজ করতেন দ্বারিকেশ। প্রমোশন পেয়ে NBTC নামক ওই কোম্পানির সুপারভাইজার পদও পেয়েছিলেন গত কয়েক বছর আগে। বুধবার ভোররাতে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার যে বহুতল আবাসনে আগুন লাগে, সেই আবাসনেই শতাধিক ভারতীয় কর্মীর সঙ্গে ছিলেন দ্বারিকেশও। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন প্রায় সকলেই। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে, ৪২ জনই ভারতীয়! বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ কোম্পানির তরফে নিশ্চিত করা হয় মৃতদের তালিকা। জানা যায়, মৃত ভারতীয়দের মধ্যে বেশিরভাগ জনই কেরালার বাসিন্দা। এছাড়াও, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার কয়েকজন আছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে আছেন একমাত্র দ্বারিকেশ পট্টনায়েক-ই। মৃতদের জন্য সংশ্লিষ্ট ওই কোম্পানির সাথে সাথে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, দাঁতনের তুরকা অঞ্চলের খন্ডরুইয়ের বাসিন্দা দ্বারিকেশ পট্টনায়েক তাঁর একমাত্র মেয়ে ঐশীর পড়াশোনার জন্য বেশ কয়েক বছর আগেই উঠে এসেছিলেন জেলা শহর মেদিনীপুরে। গত ৪-৫ বছর আগে মেদিনীপুর শহরের শরৎপ্লীতে নিজের বাড়িও করেছিলেন। মেয়ে ঐশী শহরের মেদিনীপুর কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বুধবার দুপুর থেকেই চরম দুশ্চিন্তায় আতঙ্কের প্রহর গুনছিলেন পরিবারের সকলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জানতে পারেন, না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন তাঁদের আপনজন। বৃহস্পতিবার রাতে মেদিনীপুর শহরের বাড়িতে দাঁড়িয়ে মৃত দ্বারিকেশ পট্টনায়েকের শ্যালক সায়ন্তন পট্টনায়েক বলেন, “জামাইবাবু প্রতিদিন সকালে দিদিকে ফোন করতেন। বুধবার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও ফোন করেননি! ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না জামাইবাবুকে। এরপরই, জামাইবাবুর সহকর্মী, যিনি কেরলের বাসিন্দা, তাঁকে ফোন করে দিদি। কিন্তু উনি ছুটি নিয়ে নিজের বাড়ি (কেরলে) চলে গিয়েছিলেন। তিনিই কিছুক্ষণ পর খোঁজ নিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানান এবং আমাদের টিভি দেখতে বলেন। তারপরই আমরা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করি। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় এবং বলা হয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সকলকেই। তখন থেকেই আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম শুধু। কিন্তু, সব প্রার্থনা তো ভগবানও শোনেন না! বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া হয়। দিদি, ভাগ্নি-কে সামলানোই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে!” সায়ন্তন এও জানান, “শুক্রবার কোম্পানির তরফে দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ওখান থেকে আমরা গ্রামের বাড়িতে (খন্ডরুইয়ে) নিয়ে যাব। ওখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, “কিছুক্ষণ আগেই আমরা এই শোক সংবাদ পেয়েছি। গভীর শোক প্রকাশ করছি! আমরা পরিবারের প্রতি সমস্ত ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।”

thebengalpost.net
কুয়েতের অগ্নিকাণ্ড:

thebengalpost.net
মৃত দ্বারিকেশ পট্টনায়েক (ছবি- পরিবার সূত্রে):