মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ জুলাই: “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।” ‘কবিগুরু’র এই পংক্তিগুলি তাঁর হৃদয়ে। ‘এপার বাংলা’র টানে ‘ওপার বাংলা’ (বাংলাদেশ) থেকে সাইকেলে করেই পাড়ি দিয়েছিলেন বছর ২৪-এর যুবক আশরাফুল আলম (Ashraful Alam)। তাঁর কাছে ‘বাংলা’ মানে শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ-ও! তাই, গত ২ জুলাই বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত থেকে নিজের প্রিয় সাইকেল নিয়েই রওনা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশরাফুল আলম ওরফে সানি। বনগাঁ, কলকাতা হয়ে মেদিনীপুরে পৌঁছলেন মঙ্গলবার (৫ জুলাই)। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান, জেলা শহর মেদিনীপুরের অদূরে ‘মন্দিরময় পাথরা’ দর্শন করে অভিভূত হলেন আশরাফুল! সাক্ষাৎ করলেন ‘পাথরার প্রাণপুরুষ’ ইয়াসিন পাঠানের সঙ্গে। তাঁর হাতে ‘পাথরার পাঠান’- জীবনীমূলক বইখানি তুলে দিলেন ‘কবীর পুরস্কার’ প্রাপ্ত ইয়াসিন পাঠান। যিনি গত ৫০ বছর ধরে প্রেম, ভালোবাসা আর অনন্য সম্প্রীতির নজির গড়ে আগলে রেখে চলেছেন পাথরা’র ঐতিহাসিক স্থাপত্য তথা ৩৪-টি মন্দির। শুধু পাথরা নয়, এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের এমনই অনেক বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক স্থানগুলি দর্শন করে, বুধবার খড়্গপুরের চৌরঙ্গী থেকে জাতীয় সড়ক ধরে আশরাফুল পাড়ি দিয়েছেন গৌর-নিতাই (শ্রীচৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ)- এর স্মৃতিধন্য ‘জগন্নাথ ধাম’ ওড়িশার পুরী’র উদ্দেশ্যে।

thebengalpost.net
আশরাফুল আলম:

বুধবার রাতে বেঙ্গল পোস্ট-কে আশরাফুল ফোনে জানালেন, “এই মুহূর্তে আমি বালেশ্বরে আছি। আগামীকাল সকালে পাড়ি দেব পুরীর উদ্দেশ্যে। তারপর পুনরায় রওনা দেব বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।” আশরাফুল এও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০ (চারশো) কিলোমিটার অতিক্রম করা হয়ে গেছে। আরও প্রায় ৩০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৌঁছবেন পুরীতে। পুনরায় বাংলাদেশ পৌঁছতে আরও প্রায় ৭০০ কিলোমিটার। সাইকেলে করে প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার ভ্রমণ! আশরাফুল বললেন, “ওপার বাংলা আর এপার বাংলা’র মধ্যে শিক্ষা, সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি তথা মানুষের জীবন ও জীবিকার মধ্যে মিল কতখানি তা অনুভব করতে এবং এপার বাংলার (পশ্চিমবঙ্গের) বিখ্যাত স্থানগুলি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতেই এই সফর।” কি মিল খুঁজে পেলেন, “পুরোটাই মিল। অমিল পেলাম না কিছুই! দুই বাংলার পার্থক্য শুধুই ওই কাঁটাতার টুকু। যা আমাদের কষ্ট দেয় খুব।” আর, ‘দুই বাংলা’কে মিলিয়ে দেওয়া কিশোরগঞ্জের ২৪ বছরের যুবক আশরাফুলের এই পুরো সফরে সহযোগিতা পেয়েছেন সর্বত্র। জানিয়েছেন, “এতোটুকুও সমস্যায় পড়িনি। বরং, ভালোবাসায় আমি আপ্লুত।”

thebengalpost.net
ইয়াসিন পাঠানের সঙ্গে:

আশরাফুলের বাবা বেসরকারি এক সংস্থায় কর্মরত। মা গৃহবধূ। আছেন এক দিদিও। সকলেই তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন ও সমর্থন করেছেন তাঁর এই সাইকেল সফর নিয়ে। আশরাফুল জানিয়েছেন, “এর আগে সাইকেলে করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেছি। দেশের বাইরে এই প্রথম।” মেদিনীপুরের অন্যতম ঐতিহাসিক পীঠস্থান পাথরা’র সৌন্দর্যে আশরাফুল মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কলকাতায় দর্শন করেছেন দুই দেশের (ভারত ও বাংলাদেশ) জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা তথা ‘বিশ্বকবি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাধিস্থল (নিমতলা মহাশ্মশান)। এছাড়াও, বোটানিক্যাল গার্ডেন সহ কলকাতার বিখ্যাত জায়গাগুলিও ছুঁয়ে গেছেন তিনি। আশরাফুলে মুগ্ধ ‘পাথরার প্রাণপুরুষ’ ইয়াসিন পাঠান। তিনি বললেন, “মঙ্গলবার দ্বিপ্রহরে হাজির আমার বাড়িতে। ইন্টারনেটের দৌলতে জেনে গিয়েছেন ‘ঐতিহাসিক মন্দিরময় পাথরা’ এবং আমার সম্পর্কে। আমি অভিভূত আশরাফুল আলম সানি’র বাংলা-কে দেখার এই আগ্রহ উপলব্ধি করে। সর্বশক্তিমানের কাছে ওঁর জন্য প্রার্থনা করি। সুস্থ ও সুন্দরভাবে ও যেন সফর শেষ করতে পারে।”

thebengalpost.net
বনগাঁ এলাকায়: