তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি: এ যেন এক প্রকার জীবন হাতে নিয়ে স্কুল করা! ছাদ থেকে ভেঙে পড়ছে কংক্রিটের চাঙড়। বেরিয়ে এসেছে রড। সেই অবস্থাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা। ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বসনছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কালাকড়িঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। উল্লেখ্য, করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে দীর্ঘ দুবছর পর শিক্ষা দপ্তরের ঘোষণায় খুলেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু, বিদ্যালয়ের বেহাল দশা। ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে তা খসে পড়ছে। আতঙ্কের মধ্যেই ক্লাস করছেন শিশু শিক্ষার্থী থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। এদিকে, শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরাও। শুধু অভিভাবকরাই নয়, ভাঙাচোরা স্কুলে গিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় শিক্ষক থেকে মিড-ডে মিলের রাঁধুনীদেরও। যেকোনো মুহূর্তে যেন বড়সড় বিপদের প্রহর গোনা!
জানা গেছে, প্রায় আট বৎসর ধরে এমনই বেহাল অবস্থা হয়ে রয়েছে চন্দ্রকোনার বসনছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কালাকড়িঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। যখন তখন শ্রেণীকক্ষের ছাদ থেকে চাঙড় খসে নিচে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তাই, একেবারে বেহাল শ্রেণীকক্ষ গুলিতে পঠনপাঠন বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে, তিনটি রুমের মধ্যে গাদাগাদি করে চলছে শিশুদের পঠনপাঠন। একটি রুমে একসাথে পাশাপাশি দুটি ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে অসহায় বোধ করছেন শিক্ষকেরাও। ব্যাঘাত ঘটছে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায়। এতদিন, প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে তদবির করেও কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তবে, শনিবার এই বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই-এর সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানিয়েছেন, “অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক মহাশয় বিষয়টি নিয়ে আবেদন করুন। স্কুল ভবন নির্মাণের যে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়, সেই বিষয়ে আমি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করব।”
জানা যায়, কালাকড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১০৪ জন। শিক্ষক সংখ্যা ৪। ১৯৭৯ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ের কংক্রীট বিল্ডিংয়ের বর্তমানে এমনই বেহাল দশা। ক্লাস রুম থেকে অফিস রুম, এমনকি স্কুলের বারান্দার ছাদ থেকেও চাঙড় খসে পড়ছে। বেরিয়ে এসেছে রড। একটু বিপদ বুঝলে চাঙড় খসে পড়ার আগে, লাঠি দিয়ে শিক্ষকেরা তা ছাড়িয়ে ফেলেন। শিক্ষকরা বলেন, “অফিস রুম, মিড ডে মিল ও ক্লাস রুমের অবস্থা বেহাল। তিনটি ছোট রুমের অবস্থা ঠিকঠাক থাকায়, সেখানেই আপাতত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গাদাগাদি করে চলছে পঠনপাঠন।” তবে, সংক্রমণ যেহেতু এখনও পুরোপুরি চলে যায়নি, তাই সেটাও ঠিক নয় বলে মানছেন শিক্ষকরা। কিন্তু, উপায় নেই! অভিভাবক থেকে শিক্ষক, সকলের দাবি, “দ্রুত স্কুল বিল্ডিং মেরামত করা হোক।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ পাত্র বলেন, “গত আট বছর ধরে প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও স্কুল বিল্ডিং এর টাকা অনুমোদন করাতে পারিনি!” তবে, মাসছয়েক আগে ডিপিএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করা কৃষ্ণেন্দু বিষই শনিবার এই বিষয়টি শোনা মাত্র, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।