তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জানুয়ারি:ডাক পাননি স্বয়ং বিধায়ক। মঞ্চে তৃণমূলের স্লোগান। ঘাটালের শিশু মেলা ও উৎসব ঘিরে শুরু চরম রাজনৈতিক তরজা। একই সঙ্গে মেলা জুড়ে করোনা বিধি ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্যমণ্ডিত ‘ঘাটাল শিশু মেলা’। গত ৩৩ বছর ধরে (সেই বাম আমল থেকে) ঘাটাল বাসীর প্রিয় এই মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে ঘাটাল কলেজ মাঠে। রাজনৈতিক প্রভাব কিছুটা থাকলেও, শিশু মেলার পরিচালনায় থাকেন ঘাটালের বিশিষ্টজনেরা। আর শিশুমেলার সভাপতিত্ব করেন ঘাটাল মহকুমাশাসক। কিন্তু, সেই মেলাকে ঘিরেই এবার চরম রাজনৈতিক তরজা আর বিতর্ক শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।
২৩ জানুয়ারি শুরু হয়েছে ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা। উদ্বোধন করতে এসেছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তিনি আবার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রীও বটে। মেলার উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সায়নী ঘোষ যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন কিছু তৃণমূল কর্মী সমর্থক হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে, তৃণমূলের দলীয় শ্লোগান দেন এবং সায়নী ঘোষ নিজেও মেলার মঞ্চ থেকে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। এ বিষয়ে ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, “মেলাটি বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে আয়োজিত হওয়ার কথা। কোন দলের মেলা নয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আছে বলে, মেলা নিয়ে রাজনীতি করছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, আশেপাশের সমস্ত বিধায়ক আমন্ত্রিত হলেও, তিনি ঘাটালের বিধায়ক হয়েও মেলায় আমন্ত্রণ পাননি। বিজেপি দলের প্রতিনিধি বলে তাঁকে ডাকা হয়নি! সামাজিক অনুষ্ঠানে তৃণমূল রাজনীতি করছে। ন্যূনতম রাজনৈতিক সৌজন্যতাবোধও দেখাচ্ছেন না। যদিও মেলা কমিটির সহ-সভাপতি বলেন, “এটা কোন রাজনৈতিক দলের মেলা নয়। আমরা অভিনেত্রী হিসেবে সায়নী ঘোষকে আমন্ত্রণ করেছিলাম। তিনি মঞ্চে উঠে কি বলবেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আর মেলা কমিটি কাকে আমন্ত্রণ করবে, কাকে করবে না, সেটা সবটাই তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে অহেতুক রাজনিতি করা হচ্ছে।” বিধায়ককে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে, সিপিআইএম জেলা কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উত্তম মন্ডল বলেন, “তিনি জনপ্রতিনিধি, তাঁকে আমন্ত্রণ না করাটা অসৌজন্যতার প্রকাশ।”
এদিকে, মেলার উদ্বোধনের দিন থেকেই শুরু হয় বিধি ভাঙ্গা ভিড়। যদিও, ঘাটাল মহকুমায় প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন বা তার বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন, তা সত্ত্বেও সায়নী-কে ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় সংক্রমণের ভয় দূরে চলে যায়! যদিও, মেলা কমিটির দাবি, কোভিড বিধি মেনেই এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে। তবে, মেলার ভেতরে গেলে দেখা যাবে কারুর মুখে মাস্ক আছে, কারুর তা নেই! তাঁদের মধ্যে ক্রেতাও রয়েছেন, বিক্রেতারাও আছেন। শুধু তাই নয়, শিশুমেলার মঞ্চে প্রতিদিন রাতে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে টলিউডের সেলিব্রেটিদের নিয়ে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সচেতন ঘাটালবাসী। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখতে একেতো বিধি ভাঙা ভিড়, তার উপরে আবার শিশুমেলা নামাঙ্কিত অনুষ্ঠানে বড়দের নাচাগানা! সঙ্গে ‘বেসুরো’ গানে সুর-তাল-লয় ভেঙ্গে খান খান! যদিও, মেলা কমিটির দাবি, সমস্ত আইন মেনে এবং করোনা বিধিকে মান্যতা দিয়েই ঘাটালবাসীর অত্যন্ত আবেগের এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমস্ত অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য অনলাইনে ব্যবস্থা আছে। মেলা কমিটির সহ সভাপতি দিলীপ মাঝি বলেন, “তা সত্বেও, আমরা প্রত্যেককে সতর্ক করছি। আগামী দিনে আরও সতর্ক করব।”