দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ সেপ্টেম্বর: তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত পাঁজা উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের। কিন্তু, গত প্রায় ৩০ বছর ধরে ১৫ শয্যার সেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। চলছে শুধু আউটডোর পরিষেবা। অবিলম্বে, ইনডোর পরিষেবা বা রোগী ভর্তি ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার দাবি তুললেন এলাকাবাসী। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সীমান্তবর্তী খেমাশুলি গ্রামের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর ১ নং ব্লকের অধীন এই গ্রামটি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জাতীয় সড়ক। দু’পা এগোলেই স্টেশন। এত ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থার পরও, ধুঁকছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শুধুমাত্র সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত আউটডোর পরিষেবা পাওয়া যায়। কিন্তু, দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে বড় কিছু ঘটলে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল বা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হয়! আর, তুলনায় ছোটোখাটো কিছু ঘটলে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালই ভরসা! এই পরিস্থিতিতে গ্রামের যুবক প্রণব মাহাত কিংবা প্রৌঢ় তপন মাহাত’রা দাবি তুললেন, “এই হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরিষেবা প্রয়োজন। হাসপাতাল-টি আগাছায় ঢেকে যাচ্ছে। সাপ-খোপের উৎপাত বাড়ছে।‌ স্টাফ কোয়ার্টার প্রায় ধ্বংসের মুখে! অবিলম্বে সংস্কার করে পূর্ণ সময়ের হাসপাতাল হিসেবে পুনরায় চালু করা হোক।”

thebengalpost.in
আগাছায় ঢেকেছে হাসপাতাল চত্বর :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকেই এই হাসপাতালের ইনডোর চিকিৎসা পরিষেবা অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ আছে। কিন্তু, তার আগে ১৫ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে পথ চলা শুরু করেছিল বেশ কয়েক বছর। এরপর, শুধুই আউটডোর পরিষেবা। এলাকার প্রণব মাহাত নামে এক যুবক বললেন, “আশেপাশের ২০-৩০ টি গ্রামের প্রায় ৫০-৬০ হাজার বাসিন্দা খেমাশুলি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, আউটডোর ছাড়া কোনো চিকিৎসা পরিষেবা নেই! কোনো কিছু ঘটলে এই ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। তাই, অবিলম্বে ১৫-২০ বেডের হাসপাতাল হিসেবে পুনরায় এটি চালু করা হোক। এতে উপকৃত হবেন অর্ধ লক্ষ মানুষ।” তপন মাহাত নামে এক ব্যক্তি বললেন, “হাসপাতালের ভবন, চিকিৎসকদের কোয়ার্টার সবই ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আগাছায় মুখ ঢাকছে। অবিলম্বে এগুলি সংস্কার করা প্রয়োজন।” তিনি এও বললেন, “আমরা এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরেও চিঠি পাঠিয়েছি হাসপাতাল পুনরায় চালু করার বিষয়ে। কিন্তু, কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাই, আবারও দাবি করছি পূর্ণ সময়ের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হোক এখানে।” এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে ওই হাসপাতালে একজন মেডিক্যাল অফিসার, একজন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন গ্রুপ-ডি স্টাফ আছেন। এই চারজন নিয়ে তো ইনডোর পরিষেবা চালু করা সম্ভব নয়। তবে, এলাকাবাসীর দাবির কথা আমরা রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দেব।”

thebengalpost.in
দৈনদশা হাসপাতালের :

অন্যদিকে, শুধু খেমাশুলি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র নয়, জেলার আরও কয়েকটি হাসপাতালের অবস্থাও করুণ! যেমন, অ্যানাস্থিটিস্ট না থাকায় গত প্রায় ২ বছর ধরে কোনওরকম অস্ত্রোপচার হচ্ছে না পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা গ্রামীণ হাসপাতালে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। অন্যদিকে, খড়্গপুর গ্রামীণ, শালবনী সহ বিভিন্ন ব্লকে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি’র কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও রোগী ভর্তি’র ব্যবস্থা নেই, কোথাও আবার পানীয় জল-শৌচাগার সহ নূন্যতম পরিষেবা টুকু নেই। এলাকাবাসীদের দাবি, একটা দুর্ঘটনা ঘটলে, রোগীকে জেলা বা মহকুমা বা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই রোগী মারা যাচ্ছেন! তাই, “দুয়ারে সরকার” এর সাথে সাথেই “দুয়ারে স্বাস্থ্য” পরিষেবার উপরও যেন জোর দেওয়া হয়। জেলার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র জানিয়েছেন, “অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক দাবি। এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই।‌ স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরও জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, তা আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিশ্চয়ই আলোচনা করব।”

thebengalpost.in
CMOH Dr. Bhuban Chandra Hansda :