দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পুরুলিয়া, ২৩ এপ্রিল:দুপুরবেলা পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় একটি অসুস্থ বা উন্মাদ কুকুর (Rabid/Mad Dog) তাড়া করে এবং তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর মুখ, ঠোঁট, গাল, নাক রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত করে। ডানদিকের গাল ও নাকের মাংস ভয়ঙ্করভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়! পুরুলিয়া জেলার নাদিয়াড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মহাদেব গোপ (৫০)। এরপরই, স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ (Purulia Deben Mahato Medical College and Hospital) এর সার্জারি বিভাগে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর মুখের অবস্থা দেখে শিউরে ওঠেন সকলে! অসম্ভব যন্ত্রণা ও প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে দেবেন তখন মৃতপ্রায়।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতর ধরণ দেখে সার্জারি বিভাগ থেকে রোগী-কে পাঠানো হয় নাক-কান-গলা (ENT) বিভাগে। সেখানকার বিভাগীয় প্রধান তথা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ অতীশ হালদার জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার মনোজ খান এবং ডাক্তার বুবাই মন্ডল-কে নিয়ে সার্জিকাল টিম তৈরি করেন। রোগীর অবস্থা ততক্ষণে এতই গুরুতর যে অজ্ঞান করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। নিয়মমাফিক তাঁকে জলাতঙ্কের ইনজেকশন ও ক্ষতস্থানে ইমিউনোগ্লোব্যুলিন দেওয়া হয়। এরপর, কাটা জায়গাগুলোতে ইনজেকশন দিয়ে অবশ করে পেশেন্টের ক্ষতস্থান জোড়া লাগানোর কাজ শুরু হয়। ডাঃ হালদার জানান, যদিও কুকুরে কামড়ালে সেলাই করতে নেই, তবুও মহাদেববাবু এত ভয়ংকরভাবে আহত ছিলেন যে রক্তপাত হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকায়, অস্ত্রোপচার ও সেলাই করা হয়।
এরপরই শুরু হয় ঝুঁকিপূর্ণ ও বিরল সেই অস্ত্রোপচার। প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের পুরুলিয়াতে, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মাত্র দু’বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের (ENT Department) প্রধান ডক্টর অতীশ হালদার, ডক্টর মনোজ খান এবং ডক্টর বুবাই মণ্ডলের অসাধারণ অস্ত্রোপচারের সৌজন্যে নতুন জীবন পান মহাদেব গোপ। প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে এরকম কঠিন অপারেশন করে নিঃসন্দেহে এক নজির সৃষ্টি করলো পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগ, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল।