দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ এপ্রিল:’জীবিত’ শিশুকে ‘মৃত’ (Death) ঘোষণা করার অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুরের সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। শিশুর দেহ কবরস্থ করতে গিয়ে চমকে উঠলেন পরিবারের সদস্যরা। শিশুটির শরীরে প্রাণ আছে তখনও! নড়ল হাত-পা। সদ্যজাত শিশুটি কেঁদে ওঠে বলেও দাবি। এরপর, দ্রুত হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। ফের ভর্তি করা হয় এসএনসিইউ (SNCU)- তে। নজিরবিহীন এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহাকুমা হাসপাতাল তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। এই ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্স সহ কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলে সরব হয়েছেন শিশুটির পরিবারের সদস্যরা। রবিবার হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এলাকাবাসী। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পৌঁছেছে ঘাটাল থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে মেদিনীপুর থেকে রওনা দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।

thebengalpost.net
হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ:

জানা যায়, শনিবার ভোরে প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি হন মোনালিসা খাতুন নামে গড়বেতার রসকুন্ডুর এক গৃহবধূ। দুপুর দুটো নাগাদ তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যদিও, শিশুটি সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রিম্যাচিউর শিশুটির ওজনও অনেক কম হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। জন্মের পরই শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা সহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাকে ভর্তি করা হয় এসএনএসইউ- তে। কিছুক্ষণ পর শিশুটি মারা যায় বলে অভিযোগ। বিকেল ৫টা নাগাদ পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয় শিশুটি মারা গেছে। প্রায় ৩-৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখে মাথায় মৃত স্ট্যাম্প দিয়ে এবং হাসপাতালের তরফে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে, প্যাকিং করে রাত ন’টা নাগাদ শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাড়ি নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে কবরস্থ করতে গিয়ে সকলেই দেখেন শিশুটি জীবিত, শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। তড়িঘড়ি ফের নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া শিশুটিকে ফের SNCU- তে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। আর, এই ঘটনাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী! জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই ধরনের পরিষেবা বা কান্ডকারখানায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ সকলে। তাঁরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকেই এ নিয়ে উত্তপ্ত হয় হাসপাতাল চত্বর। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। এর মধ্যেই রবিবার সকালে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। পরিবার-পরিজন এবং এলাকাবাসীর বক্তব্য, দুপুর থেকে রাত অবধি প্রায় ৭-৮ ঘন্টা ধরে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখার কারণেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সেলিম খান, বকুল খান সহ শিশুটির আত্মীয়-স্বজনদের প্রশ্ন, “একটি শিশুকে দু’বার ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হলো! এরকম কখনো শুনেছেন? কঠোর শাস্তি চাই আমরা।” হাসপাতালের সুপার যদিও দাবি করেছেন, শিশুটির মৃত্যুর পর ৩-৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখে, নিশ্চিত হওয়ার পরই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পরে, পরিবারের দাবিতে পুনরায় ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।