মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: এমনিতেই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। স্কুলের প্রায় ৮০ শতাংশ পড়ুয়াই তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের। পিছিয়ে আর্থিকভাবেও। তার উপর দীর্ঘ ২০ মাস স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন! একসময়ের মাও অধ্যুষিত (পশ্চিম মেদিনীপুরের) সেই ভীমপুর এলাকার ভীমপুর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয়ে তাই স্কুল খোলার পর বড় সমস্যা, ছাত্র-ছাত্রীদের চূড়ান্ত অনুপস্থিতির হার। আর, সেজন্যই শনিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল সংলগ্ন প্রত্যন্ত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোত ঘুরলেন। সঙ্গে ছিল মাইকিং এর ব্যবস্থাও। শালবনী ব্লকের ৬ নং ভীমপুর অঞ্চলের কুড়মি, আদিবাসী ও শবর অধ্যুষিত ভাঙাডালি, পাথরপাড়া, বালিবাঁধ প্রভৃতি গ্রামগুলিতে গিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা জানতে পারলেন, দীর্ঘ ২০ মাস স্কুল বন্ধ থাকার এই ‘কঠিন সময়ে’ অনেক ছাত্রই পড়া ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেছে কাজ করতে! অনেকেই যুক্ত হয়েছে চাষের কাজে। এমনকি একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীর বিয়েও হয়ে গেছে। তবে, ছাত্রদের অনেকেই জানাল, সোমবার থেকে তারা স্কুলে যাবে! ছাত্রীদের অনেকেই অবশ্য স্কুল যাওয়া শুরু করেছে।
শনিবার স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের পুনরায় স্কুলমুখী করতে, স্কুল সংলগ্ন গ্রামগুলোতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভীমপুর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। গ্রামে গিয়ে তাঁরা বোঝালেন স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের। কথা বললেন অভিভাবক অভিভাবিকাদের সঙ্গে। তবে, মুখোমুখি হলেন কিছু কঠিন সত্যেরও! শিক্ষক দেবব্রত মাইতি, অভিষেক মাজি, মিলন দাস, দেবাশীষ ঘোষ, শিক্ষিকা রুম্পা ওঝা, তনুশ্রী মাহাত প্রমুখরা বললেন, “এই এলাকা এমনিতেই আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া। তার উপর দীর্ঘ ২০ মাসের এই বিচ্ছেদ মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে ছেলে-মেয়েদের ধারাবাহিক পড়াশোনা বা স্কুলের সাথে আন্তরিক সম্পর্কের উপর। ফলে, সংসারে সাহায্য করতে কেউবা চলে গেছে বাইরে কাজের জন্য, কেউবা এই সময়ে চাষের কাজে যুক্ত হয়েছে। একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীর আবার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে বলেও জানতে পারলাম।” তবে, তাঁরা আশাবাদী, “ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের পড়াশোনার ‘গুরুত্ব’ বোঝানোর পর, আশাকরি আগামী সোমবার থেকে উপস্থিতির হার অনেকটাই বাড়বে।” প্রধান শিক্ষিকা সোনালী সিট সরেন বললেন, “নবম ও একাদশ শ্রেণীতে উপস্থিতির হার একেবারেই কম। দশম ও দ্বাদশেও প্রায় অর্ধেক! এমনিতেই এটা চাষের সময়, তার উপর স্কুলের সঙ্গে দীর্ঘ বিচ্ছেদে, স্কুলে যাওয়ার প্রতি আন্তরিক তাগিদ হারিয়ে ফেলেছে। আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি। স্কুলে বিভিন্ন নাচ-গান-আবৃত্তির মধ্য দিয়ে আনন্দদায়ক পাঠদানের ব্যবস্থা করছি এবং সেই কথা স্কুলে না আসা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন গ্রামে ও পাড়ায় ধারাবাহিকভাবে মাইকিং করা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন। ফলে একটু একটু করে উপস্থিতির হার বাড়ছে! আশা করছি সোমবার থেকে আরও বাড়বে।”