দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ জানুয়ারি: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের ধলহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানুযারি মাস ব্যাপী পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে স্কুলে ভর্তি করার কর্মসূচি চলছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমিত কুমার পাত্রের নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি প্রচার অভিযানের সপ্তম দিনেও (শুক্রবার) নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হলো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। শিক্ষকরা বললেন, প্রচারে বেরিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক শিশুর বয়স ৭ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু, তাকে স্কুলে ভর্তি করেননি বাবা-মায়েরা! গ্রামের ওই খেটে খাওয়া মানুষগুলির বক্তব্য, “স্কুলই তো বন্ধ, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করে কি লাভ!” বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের বোঝান। স্কুলে ভর্তি করলে কতকিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, সেই বিষয়গুলিও সকলকে অবগত করা হয়। এছাড়াও, স্কুলের শিশুরা কেমন আছে, পড়াশুনা করছে কিনা, খোঁজখবর নেওয়া হয়। সেখানেও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে হয় শিক্ষকদের! অধিকাংশ পড়ুয়া পড়াশোনা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ। তাই, শিশুদের বাড়িতে শিক্ষকরা পৌঁছনোয় তারা খুশি হলেও, খুশি হতে পারলেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা বললেন, অতিমারী রুখতে প্রশাসনের নিয়ম মেনে নিয়েও, মন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই নিদারুণ পরিস্থিতি!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত প্রায় দু’বছর ধরে স্কুলের দরজা বন্ধ শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য। এই দু’বছরে মাঝেমধ্যেই উঁচু ক্লাসের (নবম-দ্বাদশ) ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল খুললেও, অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়ুয়াদের জন্য তা পুরোপুরি বন্ধ! ফলে, স্কুলে যাদের ভর্তি হওয়ার বয়স হয়েছে, তারা শুধু খাতায় কলমে ভর্তি হয়েছে মাত্র, স্কুলের মুখ দেখেনি এখনও। শহরাঞ্চলের বেসরকারি মাধ্যম স্কুলগুলিতে ৩ বছর বা ৪ বছরের শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকলেও, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তা ৫ উত্তীর্ণ (5+ প্রাক প্রাথমিক) বা ৬ উত্তীর্ণ (6+ প্রাথমিক) বয়সে। আর, এক্ষেত্রেও সচেতন বাবা-মা তথা অভিভাবক-অভিভাবিকারা স্কুলে ভর্তি করলেও, অতিমারী আবহে যেসকল বাবা-মায়েদের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়েছে কিংবা শিক্ষা-দীক্ষা’র অসচেতন, তাঁরা খাতায়-কলমেও ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করতে ভুলে গেছেন! সর্বোপরি, যে মিড-ডে মিলের সৌজন্যে গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র অধ্যুষিত ছেলেমেয়েদের সঙ্গে স্কুলের আন্তরিক সম্পর্ক বজায় থাকত, এখন আর তা নেই। তা সে যতই মাসে একবার মিড-ডে মিলের সামগ্রী প্রদান করা হোক না কেন! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা (বিশেষত গ্রামাঞ্চলের) বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এই কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়েছেন! আর, দারিদ্র্য অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তো রীতিমতো অপুষ্টিতে ভুগছে ছেলে-মেয়েরা। অন্যদিকে, প্রতিটি এলাকাতেই ছেলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর এই ‘স্কুল বন্ধ থাকা’র কঠিন বাস্তবটি যে রীতিমতো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তা একযোগে মেনে নিয়েছেন সকল বিশেষজ্ঞরাই।