দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৪ সেপ্টেম্বর:’লাইভ স্ট্রিমিং’-কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) নবান্নের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন। লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়।” শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে (১টা নাগাদ) হঠাৎ করেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিজি রাজীব কুমার সহ পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা ছিলেন তাঁর সঙ্গে। প্রবল বিশৃঙ্খলা আর স্লোগানের মধ্যেই তিনি মাইক হাতে নিয়ে বলেন, “আমাকে একটু বলতে দিন। আমি যখন এসেছি, আমি আমার কাজ করবই। আমি মাত্র ৫ মিনিট সময় নেব। আমি নিজেও আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নয়, বড় দিদি হিসেবে এসেছি আপনাদের কাছে। গতকাল সারারাত আপনারা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বসে ছিলেন। আমিও সারারাত ঘুমোতে পারিনি। আপনাদের পাহারাদার হিসেবে আমিও সারারাত জেগেছি। ৩৪ দিন ধরে আপনার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমিও ৩৪ দিনই ঘুমোতে পারিনি। এটাই আমার ‘শেষ চেষ্টা’! আপনাদের দাবিগুলি আমি সাধ্যমত পূরণ করার চেষ্টা করব। কেউ দোষী হলে শাস্তি পাবেই। ওঁরা কেউ আমার ‘ঘনিষ্ঠ’ নয়। আমার উপর ভরসা রাখুন। একটু সময় দিন। কারণ, আমি একা সরকার চালাই না। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের দাবিগুলি আমি পূরণ করব। আর কষ্ট না করে, এবার আপনারা কাজে ফিরুন। সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন। আমি চাইনা আপনাদের কোন ক্ষতি হোক। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেব না। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আপনাদের খুব প্রয়োজন।”
জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘জাস্টিস’ স্লোগান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমিও জাস্টিস চাই। সিবিআই- এর কাছে আপনারা এবার জাস্টিস চান। দ্রুত বিচার শেষ করে, তিন মাসের মধ্যে দোষীদের ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলুন।” সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “আর জি কর সহ রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্রতিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি এই মুহূর্ত থেকে ভেঙে দিচ্ছি। সেখানে এবার থেকে ‘চেয়ারম্যান’ হবেন প্রিন্সিপাল বা সুপাররা। কমিটিতে থাকবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরাও।” এরপর আন্দোলনকারীদের ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান। মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জুনিয়র চিকিৎসকদের নেতৃত্বরা। তাঁরাও নিজেদের পূর্বের ‘অনড়’ অবস্থান থেকে সরে এসে জানান, “আমাদের পাঁচ দফা দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। এই দাবিগুলির সঙ্গে আমরা সমঝোতা চাই না! এগুলি আমাদের ন্যায্য দাবি। আমরা আলোচনা চাই। মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা এই মঞ্চ থেকে প্রেস মিডিয়ার মাধ্যমে জানাতে চাই, যেখানে বলবেন সেখানেই আমরা আলোচনায় বসব। আমাদের দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা হোক। আমরাও কাজে ফিরতে চাই।” পূর্বের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ এর দাবি থেকেও কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়, “আমরা আমাদের পাঁচ দফা দাবিগুলি (প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, তথ্য প্রমান লোপাটের তদন্ত এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করা, তদন্তে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পুলিশ কমিশনার বিনীত কোয়েলের পদত্যাগ, রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করা প্রভৃতি) নিয়ে অবিলম্বে আলোচনা চাই। উনি যেখানে বলবেন, সেখানেই আমরা আলোচনায় বসতে রাজি। এখানেই স্বাস্থ্য ভবন আছে। উনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য ভবনেই আলোচনায় বসুন। আমরা আলোচনায় বসতে চাই আর কিছু বলতে চাই না।”
উল্লেখ্য যে, ভাইরাল হওয়া একটি অডিওর ভিত্তিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘চক্রান্তে’র অভিযোগে শনিবার সকালেই গ্রেফতার করা হয়েছে DYFI নেতা কলতান দাশগুপ্তকে। আর তারপরই ‘সম্ভবত’ জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন, তাঁদের আন্দোলন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এবার রাজনীতি করা শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে অসহায় রোগীর পরিবারগুলি যে আরও ‘অসহায়’ বোধ করছেন; তাও উপলব্ধি করছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর দায়ও হয়তো অনেক জুনিয়র চিকিৎসকই এড়িয়ে যেতে পারছেন না! আর এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে ‘বরফ’ যে কিছুটা গলতে চলেছে, আর ‘অচলাবস্থা’ কাটতে চলেছে তা একপ্রকার বলাই যায়! জুনিয়র চিকিৎসকদের বার্তাতেও তা অনেকটাই পরিষ্কার। তাঁরা বলেন, “অবশেষে ৩৪ দিন পর মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন। আরও আগে এলে হয়তো ভালো হতো। তবে, এ নিয়ে কোন রাগ বা জটিলতা আমরা তৈরি করতে চাই না। আমরা আলোচনা চাই। মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে এসেছেন, আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। রোগী কল্যাণ সমিতিগুলি উনি ভেঙ্গে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাতেও আমরা খুশি তাঁর এই সদর্থক পদক্ষেপে অচলাবস্থা কাটবে বলেই আমরাও মনে করছি।”