মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ মে: বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পাচ্ছে ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)। যাদবপুর কিংবা প্রেসিডেন্সির মতোই মেদিনীপুর কলেজ হতে চলেছে, ‘ইউনিটারি’ (Unitary) বিশ্ববিদ্যালয়। শহীদদের স্মৃতি ধন্য সুপ্রাচীন এই কলেজের দেড়শ বছরের (১৫০ বছরের) মুকুটে এক অনন্য পালক যুক্ত হতে চলেছে! মঙ্গলবার (১৭ মে) ও বুধবার (১৮ মে) পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভা ও দলীয় সভা থেকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেছেন। ‘বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর’ এই কলেজের-ই ছাত্র ছিলেন অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসক ডগলাসের অন্যতম হত্যাকারী শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য। তাঁর নামাঙ্কিত ‘প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন’ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক সভা থেকে মঙ্গলবার (১৭ মে) মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, “দেড়শ বছরে পড়েছে মেদিনীপুর কলেজ। ওরা আমার কাছে দুটো জিনিস চেয়েছিল। একটা হল, কলেজ ক্যাম্পাসে পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা এবং অন্যটা ‘ইউনিটারি’ মর্যাদা। আমি এই সভা থেকেই ঘোষণা করছি, মেদিনীপুর কলেজকে আমরা ইউনিটারি মর্যাদা দেবো। তবে, বিধানসভায় বিল পাস করিয়ে তা লাটসাহেবের (রাজ্যপালের) কাছে পাঠাতে হবে! তিনি সই করে দিলেই হয়ে যাবে।” মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান (সৌমেন খান)-কে বলে অবশ্য পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত-ও করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার (১৮ মে) ফের মেদিনীপুর কলেজ মাঠের দলীয় সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী-কে বলতে শোনা যায়, “মেদিনীপুর কলেজকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিচ্ছি!”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীনেশ-প্রদ্যোৎ-ব্রজকিশোর-নির্মলজীবন-মৃগেন্দ্রনাথ’দের মতো বীর বিপ্লবীদের স্মৃতিধন্য মেদিনীপুর কলেজ ‘নিজেই এক ইতিহাস’! ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যমণ্ডিত তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পীঠস্থান এই মেদিনীপুর কলেজের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। ২০২২-এর ৩০ জানুয়ারি (রবিবার) ছিল কলেজের ১৫০-তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আর, ওই দিন থেকেই কলেজের সার্ধ শতবর্ষ অনুষ্ঠানের সূচনাও হয়েছে। বছরব্যাপী শুরু নানাবিধ অনুষ্ঠান। তবে, ১৫০-বছরের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে কলেজের সব থেকে বড় স্বপ্ন যেটা ছিল, তা হল ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ এর মর্যাদা লাভ করা। গত ৩০ জানুয়ারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা জানিয়েছিলেন, “অবিভক্ত মেদিনীপুরের গর্বের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ‘অটোনমাস’ বা ‘স্বশাসিত’ স্বীকৃতি। ন্যাক (NAAC), ইউজিসি (UGC) থেকে পেয়েছে সর্বোচ্চ অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বা মর্যাদা। এরপরে, আমাদের লক্ষ্য হতে চলেছে, একক বিশ্ববিদ্যালয়ে (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই) উন্নীত হওয়া।” কলেজের অন্যান্য অধ্যাপক বৃন্দ সহ সমগ্র কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই আবেদন জানানো হয়েছিল, “Unitary University বা Deemed to be University’র মর্যাদা দেওয়া হোক এই কলেজকে।” সেই আবেদন কলেজের তরফে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরেও। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কলেজের আবেদনে সিলমোহর দিয়েছেন। আর, মেদিনীপুর শহরের প্রশাসনিক সভা (১৭ মে) এবং দলীয় সম্মেলন (১৮ মে) থেকে তা ঘোষণাও করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এবার মেদিনীপুর কলেজকেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেবো। বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল পাস করিয়ে নিতে হবে।”
বোঝাই যাচ্ছে, এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা! যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সির মতো মেদিনীপুর কলেজ-ও হতে চলেছে, ইউনিটারি ইউনিভার্সিটি (Unitary University) বা একক বিশ্ববিদ্যালয় (এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অন্য কোনো কলেজ থাকবেনা)। বুধবার কলেজের অধ্যক্ষ ড. বেরা বেঙ্গল পোস্ট-কে জানিয়েছেন, “দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো! অ্যাকাডেমিক সাফল্য বা স্বীকৃতি’র প্রায় সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল ঐতিহাসিক এই কলেজ। এবার, দেড়শো বছরের এই কলেজ-কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ এবং একজন মেদিনীপুরবাসী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ঐকান্তিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। সেই সঙ্গে আমরা জেলা প্রশাসন তথা জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল-কেও ধন্যবাদ জানাই।”