দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ মে: রাত পোহালেই মুখ্যমন্ত্রী’র মেদিনীপুর সফর। সোমবার দুপুর অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, আবহাওয়া হঠাৎ করে খুব খারাপ হয়ে না গেলে, আকাশপথেই আসতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও, তিনটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট ময়দানে তৈরি অস্থায়ী হেলিপ্যাডেই নামতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুর ২ টো নাগাদ তাঁর কপ্টার মেদিনীপুর কলেজ মাঠের হেলিপ্যাডে অবতরণ করতে পারে বলে সূত্রের খবর। তারপর, সেখান থেকে তাঁর সার্কিট হাউসে যাওয়ার কথা কিছু সময়ের জন্য। তারপর-ই জেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত ‘প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন’ প্রেক্ষাগৃহে নির্ধারিত প্রশাসনিক বৈঠকে (Administration Review Meeting) যোগ দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। এখনও পর্যন্ত, এই বৈঠকের সময় নির্দিষ্ট করা আছে দুপুর ৩ টা। বৈঠক শেষে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী সার্কিট হাউসে পৌঁছে যেতে পারেন। সেখানে রাত্রিবাস করে পরেরদিন দুপুর ১২ টায় নির্ধারিত কর্মী সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এরপর, বুধবার (১৮ মে) দুপুরেই তিনি রওনা দেবেন ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে। আর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জেলা সফরকে ঘিরে সাজো সাজো রব জেলাশহর মেদিনীপুরে। তবে, শুধু তৎপরতা-ই নয়; প্রশাসন থেকে শুরু করে দলীয় সংগঠন, জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে পৌরসভা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আধিকারিক বৃন্দ- সর্বস্তরে একপ্রকার চাপা উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেন! অনেকেই নাকি আতঙ্কিত-ও। জেলা শহরের অলিন্দ থেকে নিলয়ে, এখন শুধু একটাই আলোচনা, “কোপ পড়বে কার কার ঘাড়ে!”
এদিকে, আধিকারিক, প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি বৃন্দ থেকে দলীয় নেতৃত্ব- সর্বস্তরে আতঙ্ক যেমন আছে, আছে উৎসাহ-উদ্দীপনাও। ভেতরে ভেতরে আতঙ্কিত হলেও, মুখে এমনটাই বলছেন জনপ্রতিনিধি থেকে জেলা নেতৃত্ব সকলেই! যদিও, ‘আতঙ্কিত’ হওয়ার যে আছে যথেষ্ট কারণ আছে, তার ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী গত ২৭ এপ্রিল ‘নবান্ন’ থেকে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক বৈঠক এবং ৫ মে’র দলীয় বৈঠকেই দিয়েছিলেন। গড়বেতার গাছ পাচার, অবৈধ বালি খাদান, জমি কেলেঙ্কারি, টাকা তোলা বা দুর্নীতি থেকে দলে ভয়ঙ্কর গোষ্ঠী কোন্দল- সমস্ত ইস্যুতেই যে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ তা প্রশাসন ও দলীয় নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ডিএম-এসপি (DM-SP)-কে আরও দ্রুততা ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলাশাসক (District Magistrate) রশ্মি কমল-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, “রশ্মি আমার কাছে জেলা পরিষদ নিয়েও অভিযোগ আসছে। ওটাও তোমাকে দেখে নিতে হবে।” সূত্রের খবর, জেলা পরিষদ নিয়ে বড় পদক্ষেপ নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, অনেক কর্মাধ্যক্ষই নাকি তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, “দিদি সুযোগ দিলে জেলা পরিষদ নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে।” এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী’র বৈঠক বা সভার মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই, জেলা পরিষদের বিপুল ব্যয়বহুলতা বা বে-হিসেবি খরচ নিয়ে এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে! ওই খবর অনুযায়ী, বিগত অর্থবর্ষের সেপ্টেম্বর মাস অবধি নাকি জেলা পরিষদ আয় করেছে প্রায় ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা; আর ব্যয় করেছে প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার মতো। সবমিলিয়ে, আতঙ্কের বহর এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মুখ্যমন্ত্রী’র কাছে কিছু চাওয়া তো দূরের কথা, তাঁর মুখোমুখি হওয়া নিয়েই আতঙ্কে জনপ্রতিনিধিরা!
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের আগে, জেলা শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন সাজিয়ে তোলা হচ্ছে, বিগত ১১ বছরে তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাট-আউট দিয়ে। শুধু তাই নয়, প্রেক্ষাগৃহের বাইরের দেওয়ালে পড়ছে নতুন রঙের প্রলেপ। দ্রুততার সঙ্গে সংস্কার করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাঙ্গাচোরা অংশ। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে গোটা মেদিনীপুর শহর জুড়ে যেমন পড়েছে ফ্লেক্স, ব্যানার, পোস্টার; ঠিক তেমনই মেদিনীপুর পৌরসভা আবার জঞ্জাল-নর্দমা থেকে শুরু করে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়া- দ্রুততার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, দলের জেলা নেতৃত্ব ব্যস্ত কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকে। বুধবার (১৮ মে) মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট ময়দানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বুথ স্তরের রাজনৈতিক কর্মী সভাকে ঘিরে, সভাস্থল ও সভামঞ্চে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। সভায় নাকি বিপুল সমাগম হতে পারে! সেজন্য বাড়ানো হচ্ছে সভাস্থলের বা ছাউনির পরিসর! আর, কলেজ মাঠের ওই সভাস্থলে, সভামঞ্চের ঠিক পেছনেই তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী হেলিপ্যাড। সোমবার দুপুর থেকে সেখানে চলল হেলিকপ্টারের মহড়া দেওয়ার কাজ। রাজ্য ও জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে চলল মহড়া। তার আগে সভাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। ছিলেন রাজ্যের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর আধিকারিকরাও। সবমিলিয়ে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো’র প্রথম জেলা সফরকে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর শহরে এখন চরম তৎপরতা! (আপডেট: রাত্রি ১০ টার খবর অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের সময় বেশ কিছুটা এগোতে চলেছে!)