দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ এপ্রিল:”দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। যারা অবৈধভাবে নিয়োগপত্র পেয়েছেন তাদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট। যে সমস্ত যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের সুবিচার দেওয়াই আমার লক্ষ্য।” মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন এমন মন্তব্যই করেন কলকাতা হাইকোর্টের ‘দাবাং বিচারপতি’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এও মন্তব্য করেছেন, “টাকা কোথা থেকে কোথায় গেছে, সেটা আমি খুঁজে বের করব।” তাঁর নির্দেশের পরই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফের সিবিআই (CBI) এর মুখোমুখি হতে হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের ৫ সদস্যের ‘বিতর্কিত’ কমিটির উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহা। এমনকি, চার চারটি ডিভিশন বেঞ্চ ঘুরে সর্বশেষ যে বিচারপতি (সুব্রত তালুকদার)’র ডিভিশন বেঞ্চে এস পি সিনহা সহ ৫ এসএসসি কর্তার আবেদন পৌঁছেছে, সেই ডিভিশন বেঞ্চ-ও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার সাহস পায়নি! তবে, তদন্তে সহযোগিতা করলে, এস পি সিনহা-কে ‘হেফাজতে নেওয়া যাবেনা’ বলে জানিয়েছেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিবিআই- এর মুখোমুখি হয়ে এস পি সিনহা সমস্ত দোষ চাপিয়েছেন কম্পিউটার উপর। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, সিনহা জানিয়েছেন, “কম্পিউটারের ভুলে ওই প্রার্থীদের নাম নিয়োগ তালিকায় ঢুকে গিয়েছিল!” তিনি এও জানিয়েছেন, “আমাকে যেভাবে ওই প্যানেল দেওয়া হয়েছিল, আমি সরাসরি তা কম্পিউটারে তুলতে বলি। তাতে কী নাম ছিল, কতজন পাস করেছিল, তা আমি দেখিনি।” বলাই বাহুল্য, এস.পি সিনহার এই ‘যুক্তি’ সিবিআই এর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সর্বোপরি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই এসএসসি কর্তাকেই ‘মেন কালপ্রিট’ বলে উল্লেখ করে দিয়েছেন যেখানে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কমিটির শীর্ষস্থানে থাকা এস.পি সিনহার নির্দেশ অনুযায়ীই, বাকি চার কর্তা, যথাক্রমে- সুকান্ত আচার্য (তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব), প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, (তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ওএসডি), তাপস পাঁজা (শিক্ষা দফতরের আইনি অফিসার) এবং অলোক কুমার সরকার (শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর) মেধাতালিকায় দুর্নীতি করেছিলেন। টাকার বিনিময়ে অসংখ্য অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল! বঞ্চিত হয়েছিলেন হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী চাকরিপ্রার্থীরা। এবার, সেই সব চাকরি প্রার্থীরাই আশার আলো দেখছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নজিরবিহীন তৎপরতায়। মঙ্গলবারের শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও মন্তব্য করেছেন, “যে সমস্ত যোগ্য ও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা গান্ধী মূর্তির পাদদেশ সহ বিভিন্ন জায়গায় অনশনে বসে আছেন, তাদের সুবিচার দেওয়ার কথা ভাবুক রাজ্য সরকার।” যদিও, রাজ্য সরকারের আইনজীবী মঙ্গলবারের শুনানিতে মন্তব্য করেছেন, “আদালত নির্দেশ দিলে, অবৈধভাবে নিয়োগপত্র পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের রাজ্য সরকার বাতিল করতে প্রস্তুত।” তবে, আপাতত দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছেন। আর, শুধু নবম-দশম নয়, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ- সি, ডি থেকে শুরু করে এসএসসি (School Service Commission)’র সমস্ত বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরাও আশায় বুক বাঁধছেন!