দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ সেপ্টেম্বর: পিংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত পটচিত্র পরিদর্শনে UNESCO’র পরিদর্শক দল। শুক্রবার পরিদর্শন করলেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধি জন সিভিস্টিয়েন কার্টিস। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের আধিকারিক চিরঞ্জিত গাঙ্গুলি, ক্যাবিনেট মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুইয়া, জেলাশাসক আয়েশা রানী প্রমুখ। এদিন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা’র নয়া গ্রাম ঘুরে দেখেন প্রতিনিধিরা। মুগ্ধ হয়ে শোনেন মধ্যযুগের চন্ডীমঙ্গলের কাহিনী কিংবা একবিংশ শতকে আমেরিকার উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার (৯/১১) জীবন্ত বিবরণ! সঙ্গে প্রাণবন্ত সব ছবি। উল্লেখ্য যে, পিংলার এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পট শিল্প-কে ‘কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। বৃহস্পতিবার বাংলার দুর্গা পূজা-কে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার খুশিতে কলকাতায় যে উৎসব পালিত হয়েছে, সেখানেই এসেছিলেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের অনুরোধ করা হয়, পিংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত ও সুপ্রসিদ্ধ পট চিত্রের সৃষ্টি শৈলী খতিয়ে দেখার জন্য। এরপরই, শুক্রবার এই পরিদর্শন হয়। সঙ্গে ঘুরে দেখেন সবংয়ের বিখ্যাত মাদুর শিল্পও। ইতিমধ্যেই, পিংলার পটুয়া ও সবংয়ের মাদুর শিল্পীদের হাতে জি.আই শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। আর, এদিনের এই ইউনেস্কো পরিদর্শনের পর স্বভাবতই শিল্পীরা উচ্ছ্বসিত!
এদিন, প্রথমে ‘চিত্রতরু’ ভবনে পৌঁছে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পটচিত্র সম্বন্ধে সম্যক ধারণা গ্রহণ করেন, ইউনেসকোর কনভেনশন ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটির সম্পাদক জন সিভিস্টিয়েন কার্টিস। তারপর, পটুয়াপাড়ার শামিয়ানায় বসে পটচিত্রীদের গলায় শোনেন মঙ্গলকাব্য থেকে আধুনিক যুগের নানা চিত্রকথা। কার্টিস তাঁর নিজের মোবাইলে ক্যামেরাবন্দীও মুহূর্তগুলিকে। এরপর তিনি কথা বলেন পিংলার পট শিল্পীদের সাথে। দোভাষীর কাজ করেন খোদ জেলাশাসক আয়েশা রানী। মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “পিংলার নয়াকে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিক ইচ্ছেতে সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি। আজকে ইউনেস্কো’র প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। প্রথমবার পরিদর্শন হল। হেরিটেজ একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বা লং প্রসেস। সময় লাগবে, তবে আমরা আশাবাদী। ইতিমধ্যে, পিংলার এই পটুয়া বা পট শিল্পীদের খ্যাতি ও সৃষ্টি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। হেরিটেজ তকমা পেলে তা খ্যাতির শিখরে পৌঁছবে।”
জেলাশাসক আয়েশা রানী-ও বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী। একই সঙ্গে পর্যটন শিল্পের প্রসারে জেলা প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। অপরদিকে, প্রতিনিধি দলের তরফে পট চিত্রের এই ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, “অসাধারণ সৃষ্টি শৈলী। সেভাবে প্রাচীন পুরান ও কাহিনীকে চিত্র ও সঙ্গীতের মাধ্যমে সজীব (জীবন্ত) রূপ দেওয়া হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। নিঃসন্দেহে এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনন্য।” হেরিটেজের বিষয়টি নিয়েও তাঁদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তাই, আশায় বুক বাঁধছেন বাহাদুর চিত্রকরের মতো বিশ্বখ্যাত পটশিল্পীরা। তাঁদের কথায়, “পিংলার এই নয়া গ্রামে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। সেই কাজ শুরুও হয়েছে। দেশ-বিদেশে এর কদর আছে। অনেক পর্যটক আসবেন। আমরা আশাবাদী। হেরিটেজ তকমাও মিলবে একদিন না একদিন।” কার্টিস এদিন ঘুরে দেখেন বাহাদুর চিত্রকরের সংগ্রহশালা। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া পটচিত্রের উপহার-ও। এরপর, জেলাশাসককে সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণের পরই তাঁরা রওনা দেন সবংয়ের মাদুর পাড়ার (সারতা এলাকায়) উদ্দেশ্যে।