তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ মার্চ:”নজিরবিহীন সাড়া পড়েছে ধর্মঘটে।” জানাল যৌথ মঞ্চ। “কর্মনাশা ধর্মঘট রুখে দিয়েছেন কর্মীরা!” স্বাভাবিকভাবেই এটাই ছিল শাসকের বক্তব্য। যদিও, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাস্তব পরিস্থিতি যা লক্ষ্য করা গেল, তাতে শুক্রবারের ধর্মঘটে সরকারি কর্মচারী থেকে শিক্ষকদের রীতিমতো ‘একজোট’ই মনে হয়েছে! দিনের শেষে তাই তাঁরা বলছেন, “দানের ‘ভাতা’ নয়, অধিকারের ‘মহার্ঘ্য ভাতা’ আর ‘ভাত’ যোগাড়ের নিয়োগ চেয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল! স্বাভাবিকভাবেই তাতে সাড়া দিয়েছেন শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী থেকে ছাত্র-যুবরা।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুর আদালত:

শুক্রবার বিকেল নাগাদ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর জর্জকোর্ট সহ গড়বেতা, ঘাটাল, খড়্গপুর, দাঁতন- পাচঁটি আদালতেই সিংহভাগ কর্মচারী কাজে যুক্ত না হওয়ায় স্বাভাবিক কাজকর্ম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। খড়্গপুরের সালুয়া ও কলাইকুন্ডা ইএফআর দপ্তরে তালা-চাবিও খোলার লোক ছিলো না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ব্লক ও মহকুমা দপ্তর গুলিতে প্রায় ৩৫-৪০ ভাগ কর্মচারী ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন বলে সূত্র মারফত জানা যায়। তবে, জেলায় প্রাথমিকে স্কুল বন্ধ ছিল প্রায় ৫৩ শতাংশ। ৪৩০০ প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে হাজারখানেক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না হয় বলে জানা গেছে। প্রাথমিকের ৬১৩৭ জন অর্থাৎ ৬৩ ভাগ শিক্ষক ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। জেলায় হাই স্কুল গুলিতে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন ৫৬২৮ জন। কোনো শিক্ষক উপস্থিত না হওয়ায় ৭৬-টি হাই স্কুল সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ থেকেছে। গ্রামের দিকে একের পর এক প্রাইমারি স্কুলও বন্ধ থেকেছে বলে সূত্রের তরফে দাবি করা হয়েছে। এর সিংহভাগই ঘাটাল, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, শালবনী সহ প্রত্যন্ত এলাকার! শহরের স্কুল-কলেজ গুলি অবশ্য বিভিন্ন কারণে খুলেছিল। তবে, ছিলো ছুটির মেজাজ! এদিকে, শাসকদলের তরফে আবার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট সফল করতে আগে থেকেই (বৃহস্পতিবার) স্কুল ‘ছুটি’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। শালবনীর পিড়াকাটা স্কুলে ঠিক এরকম হওয়ায়, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পরিমল ধল শিক্ষকদের কাছ থেকে এই ঘটনার জবাব চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

thebengalpost.net
ডিআই অফিসের সামনে:

অন্যদিকে, এদিনই ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এআইডিএসও’র মতো ছাত্র সংগঠনগুলি। এনিয়ে মেদিনীপুর কলেজ ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের সঙ্গে TMCP’র সদস্যদের রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। মেদিনীপুর কলেজে প্রবেশপথের সামনেই ধস্তাধস্তি থেকে হাতাহাতি শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। এরপর, কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগেই অবশ্য এআইডিএসও’র এক ছাত্রকে গুরুতর আহত অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে হয়। তৃণমূলের বহিরাগত ছাত্রদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মেদিনীপুর কলেজের পড়ুয়া তথা ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি সুমন জানা জানিয়েছেন, “আমরা মারধর করিনি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজে প্রবেশ করাতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরাই আক্রান্ত হয়েছি।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের সামনেও AIDSO’র সঙ্গে TMCP’র পড়ুয়াদের মধ্যে একদফা সংঘর্ষ বাধে। তবে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ কর্মচারী ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন বলে জানা যায়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালতের যে সকল কর্মচারীরা এদিন নানা কারণে ধর্মঘটে সামিল হতে পারেননি, তাঁরাও যৌথ মঞ্চের দাবিগুলির প্রতি ‘নৈতিক’ সমর্থন জানিয়েছেন‌ বলে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বত্র।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর কলেজে আহত ছাত্র: