দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২১ অক্টোবর: না, প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! বরং, মহানগরীর বুকে তাঁর ‘মমতা-হীন’ পুলিশ ২০১৪ টেট পাস নট ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন রীতিমতো ভেঙে-গুঁড়িয়ে দিল। চাকরিপ্রার্থীদের চোখের জলে, করুণাময়ী (সল্টলেক, এপিসি ভবনের সামনে)’র বুকে লেখা হল ‘কলঙ্কের রাত’ বা বিভীষিকাময় ‘কালো রাত’! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে ২০২০’র নভেম্বর মাসে ‘নবান্ন’ থেকে প্রেস কনফারেন্স করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ২০১৪ টেট পাস ২০-২১ হাজার চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে প্রথমে ১৬ হাজার ৫০০ এবং তারপর ধাপে ধাপে বাকিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই ১৬ হাজার ৫০০ নিয়োগের পরিবর্তে, ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে এখনও অবধি মাত্র ১৩ হাজার নিয়োগ হয়েছে বলে পর্ষদ নিজেই জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, মাননীয়ার মুখ চেয়ে আমরণ অনশনে বসেছিলেন অবশিষ্ট নট ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু, শেষ রক্ষা হলো না! প্রথমে ২০১৭ টেট পাসদের লেলিয়ে দেওয়া হল ২০১৪ টেট পাসদের বিরুদ্ধে, তারপর হাইকোর্টের নির্দেশে ১৪৪ ধারা বলবৎ করতে গিয়ে মধ্যরাতে মহিলা চাকরিপ্রার্থী সহ সকল আন্দোলনকারীদের টেনেহিঁচড়ে, পাঞ্জা কোলা করে, বুকে পেছনে মারতে মারতে গাড়িতে তোলার ভয়ংকর অভিযোগ উঠল! ঘড়ির কাঁটায় ২১ অক্টোবর মধ্যরাতেই (রাত্রি ১২ টার পরই) পুলিশের নির্মমতা আর চাকরিপ্রার্থীদের চোখের জলে করুণাময়ীর বুকে ‘কালো রাত’ দেখলো বঙ্গবাসী।
উল্লেখ্য যে, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে জরুরি ভিত্তিতে পর্ষদের আবেদনের সুনামি হয়। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালের অভিযোগ অনুযায়ী, আন্দোলনের জেরে তাঁদের কাজ স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর করা মামলার প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট দু’টি নির্দেশ দেয়। বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বলে, কর্মীরা যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, তা দেখতে হবে পুলিশকে। রাজ্য যে হেতু ১৪৪ ধারা জারি করেছে, তা কার্যকর করতে হবে পুলিশকেই। যদিও আন্দোলনকারীদের আন্দোলনস্থল বদলানোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেননি তিনি। তবে, তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার আবেদন করেন বৃহস্পতিবার রাতেই। আবেদনে সাড়া দেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। আজ, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সেই মামলার শুনানি হবে বলে জানা গেছে। মামলাকারীদের হয়ে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী ফিরদৌস সামিম সহ বাম-বিজেপি-কংগ্রেস- এর অসংখ্য আইনজীবী। সারা রাত অবধি তাঁদের পাশে ছিলেন বাম আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল, তরুণজ্যোতি তেওয়ারি এবং কংগ্রেসের কৌস্তব বাগচিরা। তবে, ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ওঠার আগেই এই ধরনের পুলিশি নির্মমতার সমালোচনায় বাম-ডান নির্বিশেষে আপামর শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিকরা!