দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ ডিসেম্বর: শাল-মহুয়ার দেশ ‘জঙ্গলমহল’ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী। সেই শালবনী ব্লকেই মারাত্মকভাবে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ এক কারখানার বিরুদ্ধে। মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে ভাদুতলায় অবস্থিত সেই কারখানার নাম ‘জঙ্গলমহল এগ্রো অয়েল প্রাইভেট লিমিটেড’ হলেও, আদতে তা পরিবেশ ও মানুষের জন্য ‘বিপজ্জনক’ ছাই নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বলে অভিযোগ! শুধু তাই নয়, যে বনদপ্তরের কাজ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা; গত ৩ বছর ধরে সেই বনদপ্তরের জমিও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করে কারখানা কর্তৃপক্ষ দূষিত ছাই বা বর্জ্য ফেলে চলেছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা উপেক্ষা করা থেকে ‘বৈধ’ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগও আছে জঙ্গলমহল এগ্রো অয়েল প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এবার সেই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে শালবনী ব্লক প্রশাসন তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

thebengalpost.net
ছাইয়ের পাহাড়, সোমবার পরিদর্শন করেছেন PDO:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সপ্তাহ খানেক আগেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাগজপত্র সহ গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে ‘সবুজ’ শাল-মহুয়ার জঙ্গল ঢেকেছে ছাইয়ের ধূসরতায়। প্রকৃতির মাঝে বসবাস করেও হাঁপানি, চর্মরোগ, অ্যাজমা ব শ্বাসকষ্টে ভুগছেন শালবনী ব্লকের ভাদুতলা সংলগ্ন ভাদুতলা, নিশ্চিন্তপুর, কুতুরিয়া, ধান্যশোল এলাকার বাসিন্দারা। চোখে-মুখে ছাই মেখে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র থেকে গাছপালা, চাষের জমিতে ছাইয়ের আস্তরণ! সবমিলিয়ে, শালবনীর ১০নং কর্ণগড় অঞ্চলের ভাদুতলা সংলগ্ন এই এলাকাগুলিতে জনজীবন এক প্রকার বিপর্যস্ত স্থানীয় জঙ্গলমহল এগ্রো অয়েল প্রাইভেট লিমিটেডের ‘অবৈধ’ কান্ড-কারখানার সৌজন্যে! সেই খবর বেঙ্গল পোস্ট সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে শালবনী পঞ্চায়েত সমিতি, শালবনী ব্লক প্রশাসন এবং বনদপ্তর। মেদিনীপুর বনবিভাগের ভাদুতলা রেঞ্জ এবং শালবনী ব্লক প্রশাসনের তরফে নোটিশ জারি করা হয় ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রশাসন সূত্রে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে কোন বৈধ কাগজপত্র বা সঠিক জবাব দিতে পারেন নি জঙ্গলমহল এগ্রো অয়েল প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

thebengalpost.net
আবেদন:

আর তাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশে শালবনী ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই কারখানার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ জানা গেছে প্রশাসনের একটি সূত্রে। এই বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শালবনীর বিডিও রোমান মন্ডল জানিয়েছেন, “গ্রামবাসীদের অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা কর্তৃপক্ষকে সঠিক বা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলেছিলাম। আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁরা উপস্থিত হননি। এমনকি সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পাবলিক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (POD)-কে ওই কারখানা পরিদর্শনে পাঠানো হলেও, কর্তৃপক্ষ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি! তাই, BLRO-কে সঙ্গে নিয়ে বুধবার আমি পরিদর্শনে যাব। তারপরই জেলা প্রশাসনের হাতে সেই রিপোর্ট তুলে দেবো।” সূত্রের খবর, ওই এলাকায় দূষণ সৃষ্টিকারী এই কারখানার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। কারণ, এই ধরনের কারখানা চালানোর বৈধ কাগজপত্রই নাকি নেই কর্তৃপক্ষের কাছে! গ্রামবাসীদের তরফে, জীবনকৃষ্ণ মাহাত, সোমনাথ মাহাত, ধনঞ্জয় মাহাত প্রমুখ বলেন, “শুনেছিলাম আইসক্রিম কারখানা তৈরি করার কথা ছিল। তারপর দেখলাম, অন্য একটি কারখানার বর্জ্য এনে সেই বর্জ্য থেকে নিম্নমানের তেল তৈরি করছে এরা। আর ছাই ফেলছে বনদপ্তরের জায়গায়। সমস্ত নিয়মকানুন বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা উপেক্ষা করে দূষণে ভরিয়ে তুলছে এলাকা।” শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক সন্দীপ সিংহ বলেন, “আমাদের দাবি, প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ করুক কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।” কারখানার এক কর্মী জানিয়েছেন, “এই কারখানায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েল তৈরি হয়। সেই সমস্ত কাগজপত্র আছে। আমরা বনদপ্তরের জায়গা থেকে ছাই সরিয়ে নেব।”

thebengalpost.net
ছাইয়ের পাহাড়:

thebengalpost.net
ছাই ঢাকা রাস্তা পেরিয়ে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):