দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা, ২০ ডিসেম্বর: স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রথম এসএলএসটি (1st SLST)- তে বেনোজির দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আজ প্রায় ৯ মাস ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন নবম থেকে দ্বাদশের মেধা তালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা। প্রায় ২৭৫ দিনের আন্দোলনের উপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা-ঠান্ডা বয়ে গেছে! তবুও, সুষ্ঠু সমাধানের পথে এগোয়নি রাজ্য সরকার তথা স্কুল শিক্ষা দপ্তর। তাই, আন্দোলনকারীরা বাংলার বুদ্ধিজীবীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁদের হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানোর জন্য। এবার, পশ্চিমবঙ্গের একদল বুদ্ধিজীবী মুখ্যমন্ত্রীকে লিখলেন খোলা চিঠি! তাঁদের বক্তব্য, “আমরা, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমাজসচেতন ও মানবিকতার প্রতি দায়বদ্ধ নাগরিকেরা পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত 1st SLST(2016) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাতালিকাভুক্ত নবম থেকে দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের পক্ষ থেকে এই দাবিপত্র পেশ করছি।” তাঁদের মতে, “স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে নানাবিধ অস্বচ্ছতার কারণে অদ্যাবধি তিন দফার অন্দোলন হয়েছে। কী পরিমাণ দুর্নীতি বঞ্চনা প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হলে, একটা প্যানেলের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর তিন দফার অন্দোলন হয় তা সহজেই প্রনিধাণযোগ্য।”

thebengalpost.net
আন্দোলন চাকরিপ্রার্থীদের :

প্রসঙ্গত, আজ আড়াই বছর কেটে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি, যাঁরা যোগ্য তাঁরা বঞ্চিতই রয়ে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া কমিটি চরম দুর্নীতি করেছে বলে তাঁদের অভিযোগ। বুদ্ধিজীবীরা চিঠিতে জানিয়েছেন, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথম দফার আন্দোলন শেষে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পালন হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া কমিটিতে যে ৫ জন আন্দোলনকারী হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন, অনেক পেছনে র‍্যাঙ্ক থাকলেও, তাঁরা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠরা চাকরি পেয়ে যায়! এমনকি, মেধাতালিকায় না থাকা চাকরিপ্রার্থীরাও আজ বিদ্যালয়ে চাকরি করছে বলে অভিযোগ তাঁদের। বিভিন্ন অকাট্য দুর্নীতির প্রমাণ নিয়েই যে আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, এই বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছেন বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। সেই সমস্ত দুর্নীতির প্রমাণ স্কুল সার্ভিস কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হলেও, হেলদোল নেই কমিশনের। শুধুমাত্র কলকাতা হাইকোর্টের বিচারে, কয়েকজন যোগ্যপ্রার্থী ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছেন। এখনও ভুরি ভুরি মামলা আদালতে বিচারাধীন! এই পরিস্থিতিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে বুদ্ধিজীবীরা যে প্রশ্নগুলি তুলেছেন, “যেখানে পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হলো, যেখানে পরীক্ষায় না বসা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হলো, যেখানে তালিকায় না থাকা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হলো, যেখানে মেধা তালিকায় পেছনে থাকা প্রার্থীকে মেধাতালিকায় উপরে থাকা প্রার্থীকে টপকে চাকরি দেওয়া হলো, যেখানে এত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হলো; সেখানে যোগ্য অথচ বঞ্চিত শিক্ষক/শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের রাস্তায় নিজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ধর্না দিতে হচ্ছে! আমরা এর প্রতিকার চাই।”

thebengalpost.net
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বুদ্ধিজীবীরা :

এই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা, তাঁরা হলেন-
১.তরুণ মজুমদার (চিত্র পরিচালক) ২.পবিত্র সরকার(শিক্ষাবিদ) ৩.অম্বিকেশ মহাপাত্র(অধ্যাপক) ৪. মন্দাক্রান্তা সেন (বাচিক শিল্পী) ৫.কৌশিক সেন (অভিনেতা) ৬.সব্যসাচী চক্রবর্তী (অভিনেতা) ৭.নন্দিনী মুখোপাধ্যায় (অধ্যাপক) ৮.মীরাতুন নাহার(শিক্ষাবিদ) ৯.রজত বন্দ্যোপাধ্যায়(নাট্যব্যক্তিত্ব) ১০.অরুণাভ গাঙ্গুলী(চিত্র পরিচালক) ১১.ফুয়াদ হালিম( চিকিৎসক) ১২.বিমল চক্রবর্তী (অভিনেতা) ১৩.কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়( চিত্র পরিচালক) ১৪.বাদশা মৈত্র(অভিনেতা) ১৫.সীমা মুখোপাধ্যায়(নাট্যকার) ১৬.অনীক দত্ত (চিত্র পরিচালক) ১৭.সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (আইনজীবী) ১৮.স্বপ্নময় চক্রবর্তী(সাহিত্যিক) ১৯.পল্লব কীর্তনীয়া (গীতিকার ও গায়ক) ২০.চন্দন সেন(অভিনেতা) ২১.দেবদূত ঘোষ(অভিনেতা) ২২.কাজী কামাল নাসের (গীতিকার ও গায়ক) ২৩.মনীষা আদক(নাট্য ব্যক্তিত্ব) ২৪.শমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাচিক শিল্পী) ২৫.শুভ্রা ব্যানার্জ্জী ( সমাজকর্মী ) ২৬.সৌরভ পালোধী (নাট্যব্যক্তিত্ব) ২৭.লীনা ঘোষ (শিক্ষিকা) ২৮.শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার (সঙ্গীত শিল্পী)।