দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ ফেব্রুয়ারি: তিন বন্ধু সকাল থেকে দু’টো টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরেছিল। বাড়িতে কিছু খাওয়া-দাওয়া করে খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের (KV-2) নবম শ্রেণীর ছাত্র আরিয়ান মা-কে বলে আরও একটা টিউশন আছে। এরপরই রেলকর্মী মায়ের স্কুটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোয় সে। ছুটির দিন (রবিবার) বলে মা-ও বিশেষ বাধা দেননি! বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার সহপাঠী তথা মামাতো ভাই পীয়ূষ-কে ডাকে সে। পীয়ূষ-ও বাড়িতে বলে টিউশন যেতে হবে, স্যার ডেকেছেন। এরপর দুই বন্ধু মিলে তাদের আরেক বন্ধু আর্য-কে ডাকে! তারপরই সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিন জনে মিলে খড়্গপুর শহরের ইন্দা নিউ ট্রাফিক এলাকা থেকে রওনা দেয় মেদিনীপুর ও খড়্গপুরের সংযোগস্থলে মোহনপুর ব্রিজ (বীরেন্দ্র সেতু) সংলগ্ন অ্যানিকাট ড্যামে। সাঁতার না জানা সত্ত্বেও আরিয়ান নেমে যায় খরস্রোতা ড্যামে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভারসাম্য হারিয়ে জলের তোড়ে ভেসে যেতে থাকে! তাকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেয় পীয়ূষ-ও। দু’জনই তলিয়ে যায়। এরপর আর্যর চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। আর্য-ও দুই বন্ধুকে রক্ষা করতে ঝাঁপ দিতে গেলে তাকে গ্রামবাসীরাই টেনে ধরেন। তাঁরাই আরিয়ান ও পীয়ূষের দেহ উদ্ধার করেন। ততক্ষণে পৌঁছে যায় খড়্গপুর গ্রামীণ থানার পুলিশও। মৃতদেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে জেলা শহর মেদিনীপুরের অদূরে অ্যানিকাট ড্যামে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বছর ১৫-র তিন কিশোর, যথাক্রমে আরিয়ান পাসোয়ান, পীয়ূষ পাসোয়ান এবং আর্য বেরা খড়্গপুর শহরের ইন্দা নিউ ট্রাফিক এলাকার রেল কলোনির বাসিন্দা। তিনজনই পড়ত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে। আরিয়ান ও পীয়ূষ আবার সম্পর্কে মামাতো-পিসতুতো ভাই। আরিয়ানের বাবা নেই। মা ও ভাই আছে। মা ঊষা পাসোয়ান পেশায় রেল কর্মী। তাঁর স্কুটি নিয়েই তিন বন্ধু রওনা দিয়েছিল। পীয়ূষের বাবা রাজেশ পাসোয়ান জানান, “আমিও রেলকর্মী। ডিউটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসি। ততক্ষণে সব শেষ! পীয়ূষ আমার বড় ছেলে। আর আরিয়ান বড় ভাগ্না। টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিল। এর বেশি আর কি বলব!” অন্যদিকে, রাজেশ পাসোয়ানের ছোট বোন ঊষা দেবী এর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। এদিন হারালেন বড় ছেলে আরিয়ানকে! শোকে একপ্রকার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। বলে চলেছেন একটাই কথা, “কেন তোকে আটকালাম না! আমি যে সব হারিয়ে ফেললাম।” মেদিনীপুর মেডিক্যালে দাঁড়িয়ে আর্য-র বাবা-মা বলেন, “গ্রামবাসীরা না টেনে ধরলে, ওকেও আজ ফিরে পেতাম না!”