দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ জানুয়ারি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহল জুড়ে ফের মাওবাদী আতঙ্ক তৈরীর চেষ্টা! গ্রেপ্তার করা হয়েছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের এক কম্পিউটার দোকানি তথা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের মালিককে। যদিও, জিজ্ঞাসাবাদে ইতিমধ্যেই ওই যুবক ঘটনার ‘মূল চক্রী’ হিসেবে শালবনী ব্লকের এক ব্যক্তির নাম নিয়েছে! প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লক থেকে শুরু করে শালবনীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি লাল কালিতে লেখা ‘মাওবাদী নামাঙ্কিত’ পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। মাত্র দু’দিন আগে শালবনীর কলসিভাঙ্গা এলাকাতেও একটি পোস্টার ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। তবে, তা ‘লাল কালিতে’ লেখা পোস্টার ছিল না, ছিল প্রিন্ট করা একটি কাগজ। যদিও তার হরফ ছিল ‘লাল’ কালিতেই! আর, এই প্রিন্ট করা কাগজ দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। বিভিন্ন সূত্র ধরে সোমবার গভীর রাতে পুলিশ হানা দেয় শালবনীর কলসিভাঙা থেকেই ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া এলাকায় একটি কম্পিউটার দোকান তথা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে। ওই দোকান বা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে হানা দিয়েই পুলিশ রহস্য উন্মোচন করে। উদ্ধার হয় এই ধরনেরই প্রিন্ট করা মাওবাদী নামাঙ্কিত একাধিক কাগজ। জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে সেগুলি। বাজেয়াপ্ত করা হয় ওই দোকানের মালিক বছর ২৫-এর অভিজিৎ মাহাতোর ল্যাপটপ ও কম্পিউটারও। সোমবার গভীর রাতেই গ্রেফতার করা হয় অভিজিৎ মাহাতোকে। আজ, মঙ্গলবার তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে পেশ করেছে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ।

thebengalpost.net
ধৃত অভিজিৎ মাহাতো:

ধৃত অভিজিৎ মাহাতোর বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের ঢড়রাশোল এলাকায় বলে জানা গেছে। সদর ব্লকের চাঁদড়া এলাকায় তার একটি কম্পিউটার দোকান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র আছে। সেখানেই এই সমস্ত পোস্টার ছাপানো হতো বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। অপরদিকে, মঙ্গলবার বেলা ১১ টা নাগাদ গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশের গাড়িতে চেপে আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত অভিজিৎ মাহাতো সাংবাদিকদের ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে এই পুরো ঘটনার দায় চাপিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের কলসিভাঙা সংলগ্ন গোলোকচকের এক ব্যক্তির উপর। ওই ব্যক্তির নাম সুকুমার মাহাতো বলে জানিয়েছে ধৃত অভিজিৎ মাহাতো। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে। এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলোকচকের‌ সুকুমার মাহাতো নামে বছর ৪০ এর ওই ব্যক্তি ইতিমধ্যে একটি খুনের ঘটনায় বেশ কয়েক মাস জেল খেটেছে। বছরখানেক আগে জেল থেকে বেরিয়ে ফের এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির করার জন্য বা এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে বেড়াচ্ছিল সে! একপ্রকার ভয় দেখিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে অভিজিৎ মাহাতোর দোকানে মাওবাদী পোস্টার ছাপিয়েছিল বলে ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। এদিকে, এই ঘটনা ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পুরো ঘটনার দায় বিজেপির উপর চাপিয়েছেন জেলা তৃণমূলের আহ্বায়ক অজিত মাইতি। দায় অস্বীকার করে, পাল্টা তৃণমূলের ঘাড়েই সব দোষ চাপিয়েছেন জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি অরূপ দাস।

thebengalpost.net
সেই পোস্টার, যা ঘিরে মাও-আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল দু’দিন আগেই: