দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ২০ অক্টোবর: সিবিআই (CBI)-এর গ্রেফতারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ‘রক্ষাকবচ’ থাকলেও, ইডি’র গ্রেফতারিতে কোনো ‘ভুল’ নেই বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। কাজে এলোনা মানিক ভট্টাচার্যের হয়ে দাঁড়ানো দেশের তাবড় আইনজীবী মুকুল রোহতগি (Mukul Rohatgi)’র সওয়াল-ও! বৃহস্পতিবার ইডি’র গ্রেফতারি নিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের মামলায় বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিক্রম নাথের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, “ইডি’র গ্রেফতারিতে কোনো ‘ভুল’নেই! ইডি’র গ্রেফতারি বৈধ।” ফলে, আপাতত ইডি (Enforcement Directorate) হেফাজতেই থাকতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু’র বেঞ্চ মানিক ভট্টাচার্যকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে ‘অপসারণ’ সংক্রান্ত মামলায় স্থগিতাদেশ জারি করলেও, সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছিল। তবে, গ্রেফতারির মতো কড়া পদক্ষেপ করা যাবেনা বলেও নির্দেশ দিয়েছিল। ওইদিন ইডি’র গ্রেফতারি নিয়ে কোনো নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে, বৃহস্পতিবার ইডি’র গ্রেফতারি সংক্রান্ত মামলার জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি বিক্রম নাথ জানিয়ে দিল, “ইডি’র গ্রেফতারি বৈধ। কোনো ভুল নেই।” সুপ্রিম কোর্ট এও জানিয়ে দেয়, এরপর কোনো আবেদন থাকলে নিম্ন আদালতে অর্থাৎ রাজ্যের ইডি আদালতে করতে হবে।

thebengalpost.net
Mukul Rohatgi:

উল্লেখ্য যে, ইডি’র গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে মানিক আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন, তাঁকে সিবিআই-এর গ্রেফতারি থেকে রক্ষাকবচ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরও, আর্থিক তছরুপের অভিযোগে ইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানিতে আদালতে ২৪ পাতার হলফনামা জমা দিয়েছিলেন ইডি’র আইনজীবী। ওই হলফনামায় মানিককে গ্রেফতারির নেপথ্যে থাকা পাঁচটি কারণও জানিয়েছিল ইডি। ইডির তরফে আইনজীবী বলেন, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়েছে। অর্পিতার বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকাও উদ্ধার হয়েছে। যে হেতু ওই অর্থের সঙ্গে প্রাথমিকে নিয়োগ মামলা জড়িত থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের অনুমান, তাই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে মানিকও এতে জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করছেন তাঁরা। দ্বিতীয়ত, ইডি সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, মানিকের নামে প্রচুর বেনামি সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে। তাঁর ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যের নামেও বিপুল সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে। মানিকের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগের তদন্তও চলছে। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা জরুরি ছিল। তৃতীয়ত, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে জানা গিয়েছে, মানিক টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন। তারও তদন্ত জরুরি। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের মানিককে দেওয়া অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচের প্রসঙ্গে টেনেও ইডির আইনজীবী তথা কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, রক্ষকবচের শর্ত ছিল মানিককে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু, বিধায়ক তা করেননি। তা ছাড়া শীর্ষ আদালত মূলত সিবিআইয়ের মামলায় মানিককে রক্ষাকবচ দিয়েছিল বলেও যুক্তি দেয় ইডি। সে ক্ষেত্রে ইডি তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে না, এমন কোথাও বলা হয়নি। মানিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করছে সিবিআই। আর, ইডি তদন্ত করছে আর্থিক তছরুপের ভিত্তিতে। দু’টি তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত প্রক্রিয়াও আলাদা। সে ক্ষেত্রে সিবিআই মামলার রক্ষাকবচ ইডির মামলায় কার্যকর হওয়ারও কথা নয়। সব বুঝেশুনেই বৃহস্পতিবার সকালে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ইডি’র গ্রেফতারিতে কোনো ‘ভুল’ নেই!

প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য যে, মানিক ভট্টাচার্যের হয়ে এই দু’দিন সওয়াল করছিলেন দেশের অন্যতম সেরা তথা নামকরা আইনজীবী মুকুল রোহতগি। প্রতি মামলা পিছু যাঁর ফিস প্রায় এক থেকে দেড় কোটি এবং শুনানি পিছু ফিস (Appearance Fees) প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বলেই সূত্রের খবর। সেই মুকুল রোহতগি-ও শেষ পর্যন্ত আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত মানিক ভট্টাচার্য-কে রক্ষা করতে পারলেন না বলে ইতিমধ্যে নেটমাধ্যমে মিম ছড়াচ্ছে! এদিন, মানিকের তরফে উপস্থিত আইনজীবী মুকুল রোহতগি জানান, এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা মানিক ভট্টাচার্যের বলে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সিবিআই-র মামলায় মানিক ভট্টাচার্য সুপ্রিম কোর্টে যে রক্ষাকবচ পেয়েছেন, সেই নথিকে ব্যবহার করেই মামলা সাজাচ্ছে ইডি। বেআইনি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় অনিয়মের অভিযোগ বাদ দিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলেও দাবি করেন আইনজীবী। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁর মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর জবাবে, শীর্ষ আদালতের তরফে রাজ্যের আদালতেই আবেদন জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত ১০ অক্টোবর মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে ইডি। আপাততো সেই ইডি’র হেফাজতেই থাকতে হবে মানিক ভট্টাচার্যকে।

thebengalpost.net
মানিকের মুক্তি নেই এখনই :