দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৫ নভেম্বর: “শিক্ষামন্ত্রী সহ উপযুক্ত স্তর থেকেই নির্দেশ এসেছিল!” কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উপস্থিত হয়ে ‘অযোগ্যদের জন্য অতিরিক্ত পদ তৈরি’র বিষয়ে শুক্রবার ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব মণীশ জৈন। যদিও, এই শুনানি চলাকালীন-ই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এসে পৌঁছয় কলকাতা হাইকোর্টে। সচিবের হাজিরা এবং সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর তিন সপ্তাহের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর এই স্থগিতাদেশ জারি করেছে বলে জানা গেছে আদালত সূত্রে। তিন সপ্তাহ পর পুনরায় এই মামলার শুনানি হবে। অন্যদিকে, এই স্থগিতাদেশ আসার আগেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ পালন করতে শুক্রবার প্রথম অর্ধেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হয়ে যান শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব (Principal Secretary)। সেখানেই তাঁর বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি ছিল- “বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত স্তর থেকে নির্দেশ এসেছিল। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ এসেছিল।”
এদিন, সচিবের উদ্দেশ্যে বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, “আইনে সংস্থান নেই, তবু কীভাবে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত? রাজ্য মন্ত্রিসভার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্তে আমি বিস্মিত! আপনি কি জানেন, কমিশনের আইন অনুযায়ী বেআইনি নিয়োগ করা যায় না? তার পরেও কেন তৈরি করা হল বেআইনি শূন্যপদ?” সচিবের উত্তর ছিল, “শিক্ষামন্ত্রী আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এর পরে আইন দফতরের সঙ্গে কথা হয়। এজি-র সঙ্গেও কথা বলা হয়। এসএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল বিষয়টি নিয়ে। তারপরই, মুখ্যসচিবকে জানিয়ে ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়।” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, “অবৈধদের নিয়োগ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা? আপনার কি মনে হয় না যে অবৈধদের বাঁচানোর জন্যই এই অতিরিক্ত শূন্যপদ? অবৈধদের সরানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছিল?” ক্ষুব্ধ বিচারপতি এও বলেন, “আমি বিস্মিত যে কী ভাবে ক্যাবিনেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? এই মামলায় ক্যাবিনেটকেও আমি পার্টি করতে পারি!” এরপরই তিনি জানান, ১৯ মে-র বিজ্ঞপ্তি (অযোগ্যদের বা বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের পুনরায় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি) প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে এমন পদক্ষেপ করা হবে যা গোটা দেশে কখনও করা হয়নি! এরপরই, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নজিরবিহীনভাবে মন্তব্য করেন, “হয় গণতন্ত্র সঠিক হাতে নেই, না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব। সকলকে এসে উত্তর দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক প্রত্যাহার করার জন্য বলব। দল হিসেবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছে করা যায় না।” এদিকে, বিকেল নাগাদ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ ‘নাম’ না করে বিচারপতির এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং ‘অরণ্যদেব গাঙ্গুলি’ (এ.জি) নাম দিয়ে বিচারপতির উদ্দেশ্যে ‘চ্যালেঞ্জ’ও ছুঁড়ে দেন। সবমিলিয়ে ‘নিয়োগ-কেলঙ্কারি’ নিয়ে এই মুহূর্তে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাজ্যের শাসকদল যেন একপ্রকার সম্মুখ সমরে!