দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ ডিসেম্বর: খোদ কলকাতা শহরের AIR QUALITY INDEX যেখানে ১০০ মাইক্রন কিউবের মধ্যে রয়েছে, সেখানে খড়্গপুর শহরের AIR QUALITY INDEX ২৬২ মাইক্রন কিউব! এমনটাই অভিযোগ খড়্গপুর শিল্প দূষণ প্রতিরোধ কমিটির। আর এজন্য সর্বাগ্রে দায়ী খড়্গপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত রেশমি মেটালিক্স কারখানা থেকে উৎপন্ন সিলিকন মিশ্রিত ধোঁয়া বা এক ধরনের গুঁড়ো! যার ফলে কারখানা সংলগ্ন এলাকার জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত বলে দাবি ওই সংগঠনের সদস্য অনিল দাস, দেবাশীষ দে, তাপস কুমার পাল প্রমুখের। এলাকার ঘরবাড়ি, খাল-বিল থেকে সবুজ প্রকৃতি সবই এই দূষণের প্রকোপে আজ ধূসর, বিবর্ণ হয়ে গেছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। ক্ষতি হচ্ছে মানব শরীর থেকে ফসলের। মরে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। এলাকাবাসীরা শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের মারাত্নক সংক্রমণ থেকে শুরু করে ক্যান্সারে ভুগছেন! এমনই মারাত্মক অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ওই কমিটি। অবিলম্বে জেলাশাসক-কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তাঁরা।

thebengalpost.net
এলাকায় সিলিকনের গুঁড়ো:

সংগঠনের তরফে অনিল দাসের অভিযোগ, “খড়গপুরে শিল্প দূষণের নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতি বছর শীত পড়লেই জাতীয় সড়কের ধারে অবস্থিত রেশমি গ্ৰুপের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সিলিকন মিশ্রিত কালো গুঁড়ো উড়ে এসে বাড়িতে প্রবেশ করছে। এমনকি শরীরের ভিতরেও ঢুকে চামড়, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ বাড়ছে। শীতের সময় এলেই বাচ্চাদের ও বড়োদের শরীর খারাপ হতে শুরু করে। কালো ধুলোর কবলে পড়ে সবুজ প্রকৃতি, পুকুর, জলাশয় ধ্বংস হতে বসেছে। গাছের পাতা তাদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ঠিক মতো করতে পারছে না। যারজন্য ভবিষ্যতে হয়তো অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যেতে পারে। পুকুরের জলে ধুলো পড়ায়, পুকুর তথা জলাশয়ের বাস্তুত্রন্ত্র ভারসাম্য হারাচাছে। সামগ্ৰিক ভাবে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।”

thebengalpost.net
জলাশয়ও দূষিত হচ্ছে:

ওই সংগঠনের আরও দাবি, দূষণের ব্যাপকতা নিয়ে কয়েকবছর ধরে লাগাতার আন্দোলন করে চলছে খড়গপুর শিল্প দূষণ প্রতিরোধ কমিটি। দূষণের বিষয়টি বিধায়কের মাধ্যমে রাজ্যের বিধানসভায় উৎথাপিত হয়েছে। পূর্বে জেলাশাসকের নজরেও আনা হয়েছিল। কিন্তু, তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার সমস্ত তথ্যাদি সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায় কমিটি। কিন্তু উনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় ADM (L & R)- এর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, অতিরিক্ত জেলাশাসক বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে, দূষণ পর্ষদের কাছে উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও, এই বিষয়ে রেশমি মেটালিক্সের (Rashmi Metaliks) কর্তা তপন নাথ জানান, “দূষণ ঠেকাতে প্ল্যান্ট এলাকা জুড়ে প্রায় এক লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছে। তাছাড়াও, রাস্তায় এবং রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলিতে নিয়মিত জল ছেটানো হয়। খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় আমাদের ইস্পাত কারখানা থেকে দূষণ হয় না। কারণ, কারখানার ৬০ মিটার ও ৯০ মিটার চিমনিতে বসানো রয়েছে ইএসপি ফিল্টার। তা সত্ত্বেও বাতাসে দূষণ ছড়াচ্ছে কিনা তা জানতে কল্যাণপুর, বড়কলা, রাজগ্রাম, পাঁচকুলিয়ায় বসানো হয়েছে বাতাসের দূষণের মান নির্ণয় করার মনিটর।” তিনি আরো জানান, সব কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরদারিতে রয়েছে। তাই, রেশমি মেটালিক্স দূষণ ছড়াচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন রেশমি গ্ৰুপের ওই কর্তা।

thebengalpost.net
দেওয়া হল ডেপুটেশন: