দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ ডিসেম্বর: করোনা কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছুই। প্রভাব বিস্তার করেছে দৈনন্দিন জীবন যাপন থেকে শুরু শিক্ষা, দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতেও। এই যেমন, দু’দিন আগে অবধি যে মোবাইল-স্মার্টফোন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের শতহস্ত দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হত, এখন সেটাই পড়াশোনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। স্কুল-বিচ্ছিন্ন ছাত্র জীবনে অনলাইন বা ভার্চুয়ালি পড়াশোনা। আর, সেটাই নাকি এখন ‘নিউ নর্মাল’! তবে, সারা দেশে কিংবা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও প্রত্যন্ত বা প্রান্তিক বহু এলাকা বা গ্রাম আছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে কম্পিউটার বা মোবাইল বা স্মার্টফোন থাকাটা নেহাতই বিলাসিতার এক উপকরণ মনে হবে! সেই সব এলাকার ছাত্র-ছাত্রী, বিশেষত প্রাথমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে এগোবে পড়াশোনা? ‘মুশকিল আসান’ করতে নেমেছে খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur)। তাও আবার মান্ধাতা আমলের রেডিও-কে হাতিয়ার করে! হ্যাঁ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রান্তিক এক গ্রামে খড়্গপুর আইআইটি’র সহযোগিতায় সৌরশক্তি চালিত রেডিও’র মাধ্যমে পড়ানো শুরু হল প্রাথমিকের পড়ুয়াদের। খড়্গপুর গ্রামীণের ভেটিয়া পঞ্চায়েতের ভুকভুকিশোল গ্রামে এই বন্দোবস্তের প্রধান উদ্যোক্তা যদিও ‘অস্তিত্ব’ নামে ইন্দার একটি সামাজিক সংগঠন। তবে, প্রযুক্তিগত সাহায্য করছেন খড়্গপুর আইআইটি’র গবেষক পড়ুয়ারা। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অনুদানে চলা আইআইটি’র সৌরশক্তি প্রযুক্তি প্রকল্পের অধীনেই এই আয়োজন।

thebengalpost.net
পড়ছে পড়ুয়ারা (ছবি- সংগৃহীত) :

প্রাথমিকভাবে, ৮ জন পড়ুয়ার উপরে সমীক্ষা চালানোর পর, এই মুহূর্তে ভুকভুকিশোল গ্রামে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ২২ জন পড়ুয়াকে নিয়ে এই পঠনপাঠন চালু হয়েছে। প্রত্যেকের বাড়িতে বসানো হয়েছে সৌরশক্তি চালিত রেডিও। গ্রামের মাঝামাঝি একটি ক্লাবঘরে রেডিও স্টেশন গড়ে ৫০০ মিটার ব্যাসার্ধের ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে। ওই ২২ জন ছাত্র-ছাত্রী কতটা জানে, তা বুঝে নিতে রবিবার একটি পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। এরপরে, বাড়ি থেকে রেডিও-র মাধ্যমে পড়াশোনা এগোবে। রেডিও স্টেশনে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে গ্রামেরই স্নাতক শিবু সরেন, দীপালি মান্ডি ও মাধ্যমিক উত্তীর্ণ অ্যাগনেস সরেনকে। তাঁরা রোজ ক্লাস নেবেন। আর সপ্তাহে এক দিন ক্লাস নেবেন সুপারভাইজ়ার শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা দে। উদ্যোক্তা সংগঠনের সভাপতি, শিক্ষক প্রসেনজিৎ দে বলেন, “গত দেড়-দু’বছরে স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের অভাবে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাই রেডিয়োকে বিকল্প মাধ্যম হিসাবে বেছেছিলাম। শিক্ষা দফতরকে জানিয়ে সাড়া পাইনি। তবে আইআইটি পুরোপুরি সাহায্য করায় সবটা সম্ভব হয়েছে”। সোমবারও খড়্গপুর আইআইটির কয়েক জন পড়ুয়া গ্রামে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের একজন জুনিয়র রিসার্চ ফেলো সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “বিষয়টি আমাদের গবেষণার অঙ্গ। রেডিয়োয় যেহেতু একমুখী পাঠদান হবে, তাই ৬ সপ্তাহ পরে আবার পরীক্ষা নিয়ে দেখা হবে, ছেলেমেয়েরা কতটা শিখল”! এই উদ্যোগে খুশি প্রত্যন্ত এই এলাকার বাসিন্দারাও। দিনমজুর এক অভিভাবক জানালেন, “আমার ছেলে
প্রথম শ্রেণি ও মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। বড় মোবাইল নেই। তাই পড়াশোনা সে ভাবে হচ্ছিল না। রেডিও-তে পড়াশোনার ব্যবস্থা হওয়ায় আমরা খুশি”। গ্রামের কেউই হয়তো কোনদিন ভাবেন নি, এই রেডিয়োও একদিন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কাজে আসবে। বলা যেতেই পারে, করোনা শুধু অনেক কিছু কেড়েই নেয়নি, অনেক কিছু আবার ফিরিয়েও দিয়েছে!