দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ ফেব্রুয়ারি: সন্ধ্যার সময় হঠাৎই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। মেয়েকে দ্রুত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাড়ির লোকজন। চিকিৎসকেরা বলেন দ্রুত অস্ত্রপচার করতে হবে। এদিকে রাত পোহালেই মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা! তবে, বাড়ির লোকজন সিদ্ধান্ত নেন, “আগে মেয়ের জীবন!” তাই, পরিবারের সম্মতিতে রাত্রি ১২টা নাগাদ অস্ত্রপচার হয় মেদিনীপুর কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুলতানা খাতুনের। অস্ত্রপচার সফল হয় তাঁর। এদিকে, ‘একরোখা’ মেয়ে সকাল ৭টা নাগাদ একটু সুস্থ অনুভব করার পরই বাড়ির লোকজনকে বলে, “আমি পরীক্ষা দিতে চাই। একটা বছর নষ্ট করব না!” মহা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েন সুলতানার অভিভাবকরা। এই সময় ‘মুশকিল আসান’ হয় মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা-র একটি ফেসবুক পোস্ট!

রবিবার রাতে সুজয় নিজের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দিয়ে ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলেন, “জেলার কোনো পরীক্ষার্থী যদি কোন রকম অসুবিধার মধ্যে পড়েন, সঙ্গে সঙ্গে আমার এই নম্বরে যোগাযোগ করবেন।” সুজয়ের এই পোস্ট দেখেছিলেন সুলতানার এক দাদা। সুলতানাদের বাড়িও বিধায়ক সুজয় হাজরার মিঞাবাজারের বাড়ির অদূরেই তালমাল বস্তিতে। এরপরই, নিজের পরিচয় দিয়ে পুরো বিষয়টি বিধায়ককে জানান সুলতানার ওই দাদা। সকাল আটটার মধ্যেই সব ব্যবস্থা করে বিধানসভার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বিধায়ক। তিনি ফোন করেন এবং সুলতানার অ্যাডমিট কার্ড পাঠান যথাক্রমে পর্ষদের আঞ্চলিক দপ্তর, পর্ষদের মনিটরিং কমিটির জেলা আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা এবং সুলতানার নিজের স্কুল (কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়) ও পরীক্ষাকেন্দ্রের (অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষিকাদের। সকাল ১০টার মধ্যেই সব ব্যবস্থা হয়। ১১টা থেকে নিজের বেডে বসে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করে সুলতানা! বাড়ির লোকজন এজন্য অকুন্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন, বিধায়ক সুজয় হাজরা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি। ফোনে সুজয় জানান, “ওর লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানাই। ও যখন পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে, সঙ্গে সঙ্গেই উদ্যোগ নিই। সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হল।”
অন্যদিকে, এদিন জঙ্গলপথে পশ্চিম মেদিনীপুরের পরীক্ষার্থীদের নিরাপদে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিলো বনদপ্তর এবং পুলিশ-প্রশাসন। হুটার বাজিয়ে ‘ঐরাবত’ গাড়ি নিয়ে গুড়গুড়িপাল-নয়াগ্রাম জঙ্গল রাস্তায় পরীক্ষার্থীদের এসকর্ট করে পৌঁছে দেওয়া হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে (নয়াগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে)। উল্লেখ্য, খয়েরুল্লাচক ও চাঁদড়া স্কুলের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্র হয়েছে নয়াগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। গুড়গুড়িপালের পরীক্ষাকেন্দ্র হয়েছে চাঁদড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। চাঁদড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নিশা ঘোষ, সুকুমার দণ্ডপাট, জিৎ পাল, কোয়েল মণ্ডল প্রমুখ বলেন, “জঙ্গল রাস্তায় হাতির ভয় তো আছেই। তবে, বনদপ্তরের কাকুরা যেভাবে সাহায্য করছেন তাতে ভয় কেটে গেছে।” উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবার পরীক্ষার্থী ৫২ হাজার ৮৯২। তার মধ্যে ছাত্র ২৪,৬৭৬, ছাত্রী ২৮,২১৬ জন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় হাতির করিডর রয়েছে জঙ্গলমহলের এমন ৬টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী। মনিটরিং কমিটির জেলা আহ্বায়ক সুভাষ হাজরা বিকেলে জানান, “নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়েছে। জেলার কোথাও কোন সমস্যা হয়নি।” সুলতানাও শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক ভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।