দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ ফেব্রুয়ারি: ভোট-পরবর্তী হিংসায় বিজেপি কর্মীকে খুনের অভিযোগে সোমবার তিনজনকে গ্রেফতার করল CBI। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার বিষ্ণুপুর অঞ্চলের মারকুন্ডা গ্রাম এলাকা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মে মাসের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা (২ মে)’র দু’দিন পর ৪ মে রাতে দুই দাদার হাতে খুন হতে হয়েছিল ভাইকে। মৃতের নাম বিশ্বজিৎ মহেশ (৪৫) তিনি এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল পাশাপাশি বাড়ির দুই ভাইয়ের। ৪ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিবাদ চরমে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত তা গড়ায় খুনে! খুনে অভিযুক্ত ছিল দাদা বিদ্যুৎ মহেশ, ভাই বিমান মহেশ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। মূল অভিযুক্ত বিদ্যুৎ পলাতক। বিমান-কে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে। সোমবার ওই পরিবারের আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই (CBI)।
জানা যায়, ওইদিন সন্ধ্যেবেলায় জমি জায়গা সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে দাদা বিদ্যুৎ মহেশ ও ভাই বিমান মহেশের সঙ্গে সঙ্গে বচসা হয় বিশ্বজিৎ মহেশের। অভিযোগ, সেই সময় দাদা বিদ্যুৎ মহেশ উঠোনে টেনে নিয়ে গিয়ে হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে থাকে বিশ্বজিৎ মহেশকে। ফলে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। মারাত্মক অভিযোগ ছিল যে, খুনের পর মৃত দেহটিকে পুকুরে ফেলে চলে যায় দাদা বিদ্যুৎ মহেশ ও ভাই বিমান মহেশ। ঘটনার খবর পেয়ে রাতে সবং থানার পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। ঘটনাস্থল থেকে খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, লাঠি এবং মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। ঘটনার পর থেকেই পলাতক দাদা বিদ্যুৎ মহেশ। তবে, ভাই বিমানকে পরবর্তীকালে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সোমবার, ভাইপো শুভজিৎ মহেশ ও দুই বৌদি অলকা মহেশ ও শিবানী মহেশকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছিল সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে।
এদিকে, বিশ্বজিৎ মহেশ যেহেতু বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তৃণমূল কর্মীরাই পরিকল্পিত ভাবে ভাইদের সঙ্গে নিয়ে, বিশ্বজিতকে খুন করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল! তবে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়, এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কর্মীরা কোনভাবেই জড়িত নয়। এটি সম্পূর্ণ জায়গা জমি সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে তিন ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা। আর সেই কারণেই খুন হতে হয়েছিল বিশ্বজিৎ মহেশকে। বিজেপি কর্মীরা চক্রান্ত করে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি। অন্যদিকে, এই বিষয়ে সবংয়ের বিজেপি নেতা অমূল্য মাইতি বলেন, “এটি পারিবারিক বিবাদ নয়, তৃণমূল কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিজেপি কর্মীকে খুন করেছিল।” মঙ্গলবার ধৃত তিনজনকে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী মৃনাল চৌধুরী জানান, “সম্পূর্ণ পারিবারিক বিবাদের জেরে খুনের ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।” এই বিষয়ে CBI এর পক্ষের আইনজীবীকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোনো মন্তব্য না করে এড়িয়ে যান।