দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ সেপ্টেম্বর: “হাই” দিয়ে শুরু। তারপর, “আচ্ছা, আমার সঙ্গে কথা বলতে তোমার ভাল লাগছে?” আর, শেষমেশ “আচ্ছা, তুমি একা ঘুমাও?” নেটমাধ্যমে ছাত্রীদের এমনই সব আপত্তিকর ‘মেসেজ’ (Message) পাঠানো তথা উত্যক্ত করার ‘অভিযোগ’ ঘিরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার মেদিনীপুর শহরের ‘ঐতিহাসিক’ মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)। কলেজের এক অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকর্মীকে ছাত্রীদের অশ্লীল বা আপত্তিকর বার্তা পাঠানো তথা উত্যক্ত করার অভিযোগে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, সোমবার অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর পুনরায় তাঁকে অন্য একটি বিভাগে যোগদান করানোর অভিযোগে ওঠে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. সত্যরঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে। এনিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অফিস রুমের বাইরে SFI-র নেতৃত্বে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখায়। বুধবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কলেজের গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্যা তথা বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা ড. মাধবী মাইতিও। কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাঁর মতে, এই ধরনের মারাত্মক অভিযোগ থাকলে ইউজিসি’র নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করতে হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও উনি তা করেননি!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলেজের চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী সত্যরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে মেদনীপুর কলেজের একাধিক ছাত্রী নেটমাধ্যমে (মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে) অশ্লীল বা আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর অভিযোগ এনেছিলেন। সত্যরঞ্জন বাংলা বিভাগে নিযুক্ত থাকায়, অভিযোগকারিনীদের মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রীই বাংলা বিভাগের। বিভাগের অফিসিয়াল গ্রুপ থেকেই ওই কর্মী ছাত্রীদের নম্বর সংগ্রহ করতেন বলে ছাত্রীদের দাবি। বিষয়টি অভিযোগ আকারে অধ্যক্ষের কাছে জানানো ছাড়াও; SFI-র তরফে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে। সত্যরঞ্জন দাসকে সাসপেন্ড করা তথা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। এরপরই গভর্নিং বডির তরফে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ সত্যরঞ্জন দাসকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয় এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু, গত ২ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ সোমবার গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই, ওই অস্থায়ী কর্মীকে পুনরায় কাজে যোগদান করানোর অভিযোগ ওঠে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকেই এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কলেজের ছাত্রীরা। বুধবার গভর্নিং বডির তরফেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয় এই বিষয়ে। এরপরই পুনরায় বৈঠকে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সত্যরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে তদন্ত করে, গভর্নিং বডি যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তাই তাঁকে মেনে নিতে হবে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. সত্যরঞ্জন ঘোষ এনিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, “অভিযোগ ‘স্বীকার’ করে ওই কর্মী মুচলেকা দিয়েছিলেন। তারপরেই তাঁকে একটা শেষ সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। তবে, তাতে আপত্তি জানানো হয়েছে গভর্নিং বডির তরফে। তাই, ওকে আবারও ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের কলেজের সংশ্লিষ্ট কমিটি এবং গভর্নিং বডি যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাই ওঁকে মেনে নিতে হবে। ওই কর্মীকে এটা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।”