শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: নিজের দু’চোখ জুড়ে অন্ধকার। অদম্য ইচ্ছেশক্তি আর সৃষ্টিশীল মানসিকতার উপর ভর করেই পড়ুয়াদের মধ্যে ‘আলো’ ছড়াচ্ছেন শিক্ষক সুরজিৎ মাইতি। নিজের ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি সত্ত্বেও, এক স্বয়ংক্রিয় ঘণ্টা তৈরি করে স্কুলে সবার মন জয় করেছেন তিনি। এই ঘণ্টা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজে থেকেই বেজে ওঠে। ফলে, একটি ক্লাস শেষ হলেই, বার্তা চলে যায় শিক্ষক ও পড়ুয়াদের কাছে। ঘন্টা বাজানোর প্রয়োজন হয়না।
উল্লেখ্য যে, জন্ম থেকেই চোখের এক বিরল রোগে আক্রান্ত সবংয়ের ভেমুয়া হাই স্কুলের জীববিজ্ঞানের এই শিক্ষক। সুরজিৎ এবং তাঁর যমজ বোন দুজনেই চোখের এক দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খুব কম দৃষ্টিশক্তি এবং দোদুল্যমান দৃষ্টিশক্তি তাঁদের পড়াশোনায় বারবার বাধা সৃষ্টি করেছে। ফলে, পঞ্চম শ্রেণিতেই তাঁদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, হার মানেননি সুরজিৎ! এক চক্ষু চিকিৎসকের উৎসাহ এবং বন্ধুদের সাহায্যে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় থেকে বি.এড ডিগ্রিও অর্জন করেন। এরপর, ধাপে ধাপে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতার পেশায় আসেন।
নিজের স্বপ্ন পূরণে অবিচল ছিলেন সুরজিৎ। ছিল বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহও। তাই, ক্ষীণ দৃষ্টির কারণে অন্যদের মতো সবকিছু স্পষ্ট দেখতে না পেলেও হতাশ হননি তিনি। বরং, এই বাধা জয় করে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। একটি বিশেষ ডিভাইস এবং স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নিজের দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়েছেন। এই প্রযুক্তির সাহায্যে তিনি আরও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়তে, লেখতে এবং শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারছেন। সম্প্রতি, নিজের হাতে একটি স্বয়ংক্রিয় ঘণ্টা তৈরি করে সকলকে অবাক করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করেছে। ভেমুয়া স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, “তাঁর জীবনের এই গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, কোনো বাধাই স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হতে পারে না। তাঁর এই অসাধারণ কৃতিত্ব সকলের কাছেই অনুপ্রেরণা!” ভেমুয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন পট্টনায়েক জানিয়েছেন, “সুরজিৎ বাবুর এই অসাধারণ প্রতিভাতে আমরা মুগ্ধ।”