দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১৯ জুলাই: “ধর্মসঙ্কট” এবং “দু নৌকায় পা“- বাগধারা বোঝাতে গিয়ে কিংবা এই দু’টি বাগধারা দিয়ে নতুন বাক্য গঠন করা শেখাতে গিয়ে এবার থেকে ‘বাংলা’র (পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এবং বাংলা বিষয়ের শিক্ষক) শিক্ষক মশাইরা যদি মঙ্গলবারের (১৮ জুলাই) বেঙ্গালুরু-বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে আনেন; তাহলে নাকি আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবেনা! এমনটাই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি-সচেতন আমজনতা থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, বেঙ্গালুরু-বৈঠকে রাহুল, সোনিয়া, মমতা, ইয়েচুরিদের পাশাপাশি হাসিমুখে দেখার পর নাকি একপ্রকার ‘ধর্মসঙ্কটে’ পড়ে গিয়েছেন এরাজ্যের বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। একদিকে তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল সরকারের ‘নজিরবিহীন সন্ত্রাস’ এর অভিযোগ তুলে মাঠে-ময়দানে লড়াই-প্রতিবাদ করছেন, আদালতে আওয়াজ তুলছেন; অন্যদিকে তাঁদের নেতারাই তৃণমূল সুপ্রিমোর দেওয়া জোটের ‘ইন্ডিয়া’ (I.N.D.I.A/ Indian National Developmental Inclusive Alliance) নামে সিলমোহর দিচ্ছেন কিংবা ‘মধ্যমণি’ রূপে বরণ করে নিচ্ছেন! পশ্চিমবঙ্গের আপামর নেটাগরিকরা (সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা) তাই বাম-কংগ্রেসের এই দ্বৈত-ভূমিকাকে আসলে ‘দু নৌকায় পা’ দিয়ে চলার সঙ্গেই তুলনা করছেন।
মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়ান এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেঙ্গালুরু থেকে যা জানিয়েছেন, তার সরবত্তা করলে দাঁড়ায়- ইন্ডিয়া নামটি সংসদ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের নেতাদের সামনে প্রস্তাব আকারে রাখলে রাহুল থেকে সোনিয়া, কেজরিওয়াল থেকে নীতিশ কুমার সকলেই একবাক্যে মেনে নেন। যদিও, কংগ্রেস মুখপাত্রের দাবি নামটি রাহুল গান্ধীর মস্তিষ্কপ্রসূত! অন্যদিকে, ২৬টি দলের অন্যতম শরিক তামিলনাড়ুর VCK দলের প্রধান থিরুমাভালাভন (Thirumavalavan) সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছেন, “নামটি (Indian National Developmental Inclusive Alliance) প্রস্তাব আকারে মমতা ব্যানার্জি রেখেছিলেন। আমরা সবাই তা সমর্থন করেছি।” এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি জারি করেননি, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি. রাজা প্রমুখ। তবে, এখনও অবধি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যমণি যে মমতা; তা ধর্মসঙ্কটে পড়া বঙ্গের বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাও ঢোঁক গিলে স্বীকার করছেন! অনেক, ছাত্র-যুব নেতারাই আবার বলছেন, “এভাবে দু নৌকায় পা দিয়ে চললে, রাজ্যের অত্যাচারিত অসংখ্য কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কিংবা রাজ্যের হাজার হাজার যোগ্য ও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের কি বলবো?”
এই সুযোগেই আবার বাংলার প্রতিবাদী বাম-কংগ্রেস নেতাকর্মীদের তৃণমূল বিরোধী বা মমতা বিরোধী মঞ্চ তৈরি করে একসঙ্গে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানালেন। তিনি এও প্রস্তাব দিয়েছেন, বিজেপিতে যদি অসুবিধা থাকে, প্রয়োজনে বিজেপির পতাকা ছেড়ে এক মঞ্চেও মিলিত হওয়া যেতে পারে! সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে শুভেন্দু জানিয়েছেন, ‘‘সারা রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস অত শক্তিশালী নয়। কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে তাদের নিচুতলার কর্মীরা পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে প্রতিরোধ করেছেন। এদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সেটিং নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের কয়েক জন কর্মীর প্রাণও গিয়েছে। কিন্তু, তার পরেও রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি তৃণমূলের সঙ্গে মিটিং করছেন। আমি ওঁদের বলব, আমাদের সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসুন। যদি, বিজেপির কারণে অসুবিধা হয়, তা হলে আলাদা মঞ্চ গড়ে লড়াই করুন। এই স্বৈরাচার থেকে বাংলাকে বাঁচাতে হবে।’’ আপাতত, এই ‘জোট’ রাজনীতি নিয়ে ‘ঘেঁটে ঘ’ নিচুতলার বাম-কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক থেকে বাংলার সচেতন নাগরিকরাও।