তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২০ তম বইমেলা এবার দাসপুরে শুরু হয়েছিল। সাতদিন ব্যাপী এই মেলার সূচনা হয়েছিল গত ১২ ফেব্রুয়ারি। মেলার সমাপ্তি হল ১৮ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। প্রসঙ্গত, এই বইমেলা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিনটি মহকুমায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে হয়ে থাকে। এবছর, ঘাটাল মহকুমার ঘাটাল শহরে ৯ জানুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির কারণে, বইমেলা প্রাথমিক পর্যায়ে স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ কমার পর, মেলার নতুন করে দিন ঘোষণা করা হয়। তবে, ঘাটালে পৌর নির্বাচন হওয়ায়, মেলাটিকে ঘাটাল থেকে দাসপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন, দাসপুরের মত গ্রামীণ এলাকায় প্রত্যাশামতো বই বিক্রি হবে কিনা, তা নিয়ে! তবে, সেই প্রত্যাশাকেও যেন ছাপিয়ে গেল বইমেলার বই বিক্রির পরিমাণ!
শুক্রবার ছিল বইমেলার শেষ দিন। উদ্যোক্তারা জানালেন, এবারের বইমেলায় ২৭ লক্ষ টাকার উপর বই বিক্রি হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ দিনে ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস ব্লকস্তরে বইমেলা করার প্রস্তাব দেন। মঞ্চে উপস্থিত প্রশাসনের অনেকেই এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া বলেন, “এবারের বইমেলা সবদিক থেকেই সফল। ইন্টারনেট সবকিছুকে এখনো কেড়ে নিতে পারেনি। আস্তে আস্তে আবার বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে সাধারণ মানুষের। এটা নিশ্চয়ই আমাদের কাছে খুশির বার্তা।” এবারের বই মেলায় ৫৮ টি প্রকাশনী সংস্থা তাঁদের বইয়ের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিল। সরকারিভাবে ৭ টি স্টল ছিল, তাদের বিভিন্ন জনমুখী প্রচারগুলি বই প্রেমীদের কাছে তুলে ধরার জন্য।
অন্যদিকে, এবারের বইমেলায় ৭ টি সরকারি স্টলের মধ্যে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের স্টলটি বই প্রেমীদের কাছে বিশেষ নজর কেড়েছিল। বইপ্রেমীরা বই কেনার সাথে সাথে ক্রেতা সুরক্ষা স্টলে ভিড় করেছিলেন। উপভোক্তা বিষয়ক স্টল থেকে জানা যায়, জিরা থেকে হিরা আপনি যা কিছু কিনতে চান, একশ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী আছে আপনাকে ঠকাতে পারে। তাই, ক্রেতাদের কেনাকাটার সময় সচেতন হতে হবে। প্রতিটি কেনাকাটায় রশিদ বিল বা ক্যাশ মেমো নিতে হবে। উপভোক্তা বিষয়ক স্টল থেকে দপ্তরের আধিকারিকরা কেনাকাটার সময় কি কি সতর্কতা নিতে হবে, ২০১৯ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ক্রেতারা কেনাকাটায় ঠকে গেলে কিভাবে অভিযোগ জানাবে, ক্রেতা আদালতে মামলা করতে গেলে কিভাবে বিনা পয়সায় সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হয়- প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্রেতাদের সচেতন করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের উপ সহ অধিকর্তা শুভ রায় বলেন, “জেলার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে, হাটে বাজারে কথা বলা পুতুল ও ম্যাজিক শো এর মাধ্যমে ক্রেতাদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়াও, ব্লক থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতে সুসজ্জিত ট্যাবলো প্রচার, পঞ্চায়েত স্তরে স্কুল-কলেজে ছোট ছোট সেমিনারের মাধ্যমে সাধারণ ক্রেতাদের সচেতন করা হচ্ছে।” উল্লেখ্য, ২০ তম বইমেলার উপলক্ষে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের স্টল, ট্যাবলোর উদ্বোধন করেন দপ্তরের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। সাথে, ক্রেতারা ঠকে গেলে প্রতিকারের জন্য অভিযোগ জানানোর আবেদন পদ্ধতি জানানো হলো। একজন ক্রেতা সচেতন হয়ে কেনাকাটার পরেও যদি ঠকে যায়, কোথায় কিভাবে অভিযোগ জানাবে, সে বিষয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা হচ্ছে। কোন দোকানদার বিল দিতে রাজি না হলে, সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিং অথরিটি পঞ্চায়েত বা পৌর প্রশাসনকে অভিযোগ জানাতে হবে। প্রয়োজনে, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে অভিযোগ করা যাবে। পণ্য পরিষেবা কেনার সময় মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হলে, জেলার আঞ্চলিক কার্যালয় মধ্যস্থতার মাধ্যমে অথবা উপভোক্তা কমিশনে অভিযোগ করা যাবে। সাথে বিনে পয়সায় সরকারি খরচে উকিল দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।