দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ জুলাই: প্রায় বছর দুয়েক আগে মেদিনীপুর পৌরসভার জন্য ১৮৫ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের “আম্রুত” (Atal Mission for Rejuvenation and Urban Transformation) জল প্রকল্পের জন্য। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি মেদিনীপুর পৌরসভা। অবশেষে, মেদিনীপুর শহরের গান্ধীঘাট সংলগ্ন প্রায় ৪ একর জায়গার উপরে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করা হলো শুক্রবার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি লিটার (৩ কোটি ৭৯৬ লিটার) জল পরিশ্রুত হবে। শহরবাসীর পানীয় জলের একটা বড়সড় সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল, অতিরিক্ত জেলাশাসক তুষার সিংলা, মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া, খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর পৌরসভার প্রশাসক দীনেন রায়, বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি অজিত মাইতি প্রমুখ। জেলাশাসক বললেন, “এই প্রকল্পের জন্য ১৮৫ কোটি টাকা অনেকদিন ধরে এসে পড়েছিল। জমির কিছু সমস্যার জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। অবশেষে, সকলের মিলিত উদ্যোগে সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু করা হচ্ছে। শহরের আড়াই লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। ২৬ হাজার বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি লিটার জল পরিশ্রুত করা যাবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন শহর ও পৌরসভা এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য ২০১৫ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী’র নামে এই আম্রুত (AMRUT) প্রকল্পের সূচনা করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ এবং রাজ্য সরকারের জমি ও অন্যান্য উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। মেদিনীপুর শহরের জন্যও বছর দুয়েক আগে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে মেদিনীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে, কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ১৮৫ কোটি টাকার, ১১৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে এসে পড়েছিল বলে জানা গেছে। এদিকে, এই প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানেও বিতর্ক পিছু ছাড়লো না! প্রথমত, যে ৪ একর জায়গায় এই প্রকল্প গড়ে উঠছে, সেখানে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের ‘উচ্ছেদ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যেই কিছুজন অভিযোগ করলেন, “পুনর্বাসন বা আর্থিক প্যাকেজ কিছুই পাইনি আমরা!” কৃপাসিন্ধু সাউ নামে একজন বললেন, “আমার পূর্ব পুরুষের রায়ত জায়গা। প্রকল্প হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু, আমাকে এই জায়গার বিকল্প জায়গা বা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি এখনও।” যদিও জেলাশাসক বললেন, “জমির সমস্যা পৌরসভার পক্ষ থেকে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই জবরদখল করে ছিলো এখানে, তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” দ্বিতীয় যে বিতর্ক উঠে এসেছে তা হল- কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধন অথচ মেদিনীপুরের সাংসদ’কেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি! মেদিনীপুর বিধায়ক জুন মালিয়া’কে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, সাংসদ দিলীপ ঘোষ’কে কেন আমন্ত্রণ জানানো হলোনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি অরূপ দাস। তাঁর মতে, “সরকারি বলে এখন আর কিছু নেই, সবটাই তৃণমূলের হয়ে গেছে! কেন্দ্রীয় প্রকল্পের শিলান্যাস অথচ মেদিনীপুরের সাংসদ’কেই ডাকা হলোনা, তিনি বিজেপির বলেই। অথচ, তৃণমূলের বিধায়ক থেকে কাউন্সিলর লেভেলের নেতারাও দেখছি উপস্থিত! কিছু বলার নেই, তৃণমূলের এটাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার।” এ নিয়ে অবশ্য শাসকদল বা মেদিনীপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে কেউ মুখ খুলতে চাননি!