মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ২৪ জুন: একরত্তি শিশুর শরীরেও মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ! কোনও নতুন ঘটনা নয়, কারণ করোনা’র প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ অবধি হাজার হাজার শিশু আক্রান্ত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৯৯ শতাংশেরও বেশি, এটুকুই আশার কথা! তৃতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে এই শিশু সুরক্ষার উপর আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাস এবার আরও শক্তিশালী হয়ে আরও কমবয়সীদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সেই আশঙ্কাতেই শিশু-সুরক্ষার বিষয়ে নূন্যতম ত্রুটি রাখতে রাজি নয় প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দপ্তর। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেও কোভিড আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ড প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যেই আশার কথা শোনালেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান তথা আইএমএ’র প্রেসিডেন্ট ডাঃ তারাপদ ঘোষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে দ্য বেঙ্গল পোস্টের প্রতিনিধিকে তিনি জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মাত্র ১ জন করোনা আক্রান্ত শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেও প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠার পথে।” এই শিশুটিই হল- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলার বাসিন্দা শুভাশিস কুইল্যা’র ৩ মাসের শিশু-পুত্র দিব্যেন্দু কুইল্যা। তার সুস্থ হয়ে ওঠার খবরে চোখে-মুখে তৃপ্তির ছাপ শুভাশিস বাবু’র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছোট্ট দিব্যেন্দু’র বাবা জানালেন, “গত কয়েকদিন আগে যৌথ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। তারা সুস্থ হয়ে ওঠার পথে। এদিকে, সোমবার (২১ শে জুন) রাত থেকে আমার ছেলের জ্বরে গা পুড়ে যেতে থাকে। মঙ্গলবার স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে, তাঁরা কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বলেন। ডেবরা’র এক নার্সিংহোমে ভর্তি করি। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু, ছেলের জ্বর সামান্য কমলেও, বমি হয়। এরপরই, ওখানের চিকিৎসকরা বলেন, মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যেতে। বুধবার সকালে এখানে ভর্তি করি। বুধবার সারাদিন দুঃশ্চিন্তাতেই কেটেছে। আজ সকালে খবর পাই, ছেলে ভালো আছে।” বিভাগীয় প্রধান বলেন, “শিশু বিভাগে এখনও পর্যন্ত সাফল্যের হার ৯৯.৯৯ শতাংশ। এপ্রিল-মে থেকে প্রতিদিনই ২০-২২ টি শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকতো। গত কয়েক সপ্তাহে দেখছি সংখ্যাটা ৭-৮ এ নেমে এসেছে। তবে, বুধবার মাত্র ২ জন করোনা সংক্রমিত শিশু ভর্তি ছিলো। একজন আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। পিংলার শিশুটি জ্বর নিয়ে ডঃ পি. সি মণ্ডলের অধীনে ভর্তি হয় বুধবার। আজ সে অনেকটাই সুস্থ।” তৃতীয় ঢেউ নিয়েও তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ” যদিও আমরা সমস্ত রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, তা সত্ত্বেও বলবো, তৃতীয় ঢেউ আসবেই কিনা বলা সম্ভব নয়। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই, তবে সচেতন থাকতে হবে।” করোনা বিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক তথা আই এম এ’র সেক্রেটারি ডাঃ কৃপাসিন্ধু গাঁতাইতও। তিনি বললেন, “সংক্রমণ দু’-একদিন সামান্য বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এজন্য তৃতীয় ঢেউ নয়, বরং সাধারণ মানুষের অসচেতনতাই দায়ী। বিধিনিষেধ শিথিল হতেই মানুষ অসচেতন হয়ে উঠছেন। তাতেই সংক্রমণ বাড়ছে। কঠোরভাবে কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে। সামান্য বেপরোয়া ভাব দেখালেই বিপদ। আর, অন্তত টানা ১০ দিন যদি সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করে, তবে বুঝতে হবে তৃতীয় ঢেউ আসছে!” একই কথা জানিয়েছেন রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীও। তিনি বললেন, “বিধিনিষেধ শিথিল হতেই সংক্রমণ বাড়ছে। আরও কিছুদিন না দেখে বলা সম্ভব নয়, তৃতীয় ঢেউয়ের প্রভাব কিনা!”