দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ জুলাই: “মানুষ মানুষের জন্য”! প্রমাণ করলেন খড়্গপুর পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর অঞ্জনা শাঁকরে। ওই ওয়ার্ডের চুনা বস্তী’তে বসবাসকারী ৭৫ বছর বয়সী প্রৌঢ়াকে এক “নতুন জীবন” দান করলেন তিনি। পরিবার-পরিজন হীন অসহায় প্রৌঢ়া প্রভাতী রাও একপ্রকার মৃত্যুশয্যায় পড়ে ছিলেন একাকী। গত ৩ বছর ধরে ডাক্তার-ওষুধ তো দূরের কথা, কেউ একটু স্নান পর্যন্ত করিয়ে দেয়নি! একঝলক দেখলে আঁতকে উঠতে হতো, এমনই বিভীষিকাময় চেহারা হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। কোনও কাজে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়, এই দৃশ্য দেখে মন কেঁদে ওঠে বিদায়ী কাউন্সিলর অঞ্জনা’র। তিনি নিজে গিয়ে, প্রভাতী’কে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসেন। সোমবার দুপুরে তাঁকে স্নান করিয়ে, মাথায় জটা লেগে যাওয়া চুল কাটিয়ে, নখ কাটিয়ে, নতুন রূপ দিলেন। তারপর, নিজের হাতে প্রভাতীকে খাইয়ে দাইয়ে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর আগেই প্রভাতী রাও’য়ের আপনজনরা তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। একটি ভাঙা-চোরা ঘরে একাই পড়ে থাকতেন এই তেলেগু মহিলা। পাশাপাশি কেউ হয়তো কোনদিন খাওয়ার দিলে খেতেন। স্নান করানো, পোশাক-আশাক বদলানোর কেউ ছিলোনা! আবর্জনার মধ্যে, অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে থাকতে সারা শরীরে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। দুর্গন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সারা শরীরে। সেজন্যই সচরাচর কেউ তাঁর সামনে দিয়ে যেতেন না! এই পরিস্থিতিতেই প্রভাতী’কে দেখে নিজের অন্তর ডুকরে কেঁদে ওঠে মারাঠী কাউন্সিলর অঞ্জনা’র। ডাক দেয় মানবিকতা। অঞ্জনা জানান, “একপ্রকার ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। এতোটাই দুর্গন্ধ ছিলো, সামনে যাওয়া যাচ্ছিলোনা। জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, ওনার কেউ নেই, প্রায় ৩-৪ বছর স্নান করেননি! তারপরই আমি ৭৫ বছরের ওই বৃদ্ধা’কে ওখান থেকে নিয়ে এসে, স্নান করিয়ে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিজের হাতে খাইয়ে দি। আমাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করেছে আমার সহকর্মীরা। ওনার নাকে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিলো। সকলের সহযোগিতায় আপাতত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি। এরপর, ওনাকে স্থানীয় নির্মল হৃদয় আশ্রমের হাতে তুলে দেব।” অনেকেরই হয়তো মনে পড়ে যাবে, মুন্নাভাই এমবিবিএস সিনেমার কথা! না, এটা সিনেমা নয়; তবে সিনেমার মতোই মনে হবে। প্রভাতী নিজেও হয়তো ভাবেন নি, এই বয়সে, এভাবে তাঁর জীবনে “নতুন প্রভাত” আসবে! প্রভাতীর প্রতিবেশীরাও এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্জনা শাঁকরে’র এই মানবিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন। সকলেই বলছেন, “এভাবেই বেঁচে থাকুক মানবতা!”