দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: প্রার্থী তালিকায় ছিল চমক। ময়দানের লোকজনদের সঙ্গেই মিলেমিশে ছিলেন লাল, নীল, সবুজ, গেরুয়া’র তাবড় নেতা-কর্মী-সমর্থক থেকে জনপ্রতিনিধিরা। লড়াইও হল হাড্ডাহাড্ডি। শেষ রাউন্ডের গণনা অবধি ছিল টানটান উত্তেজনা! চূড়ান্ত ফলাফলের আগে করতে হল লটারিও। ৪৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান বজায় রেখে ১৯ জন জয়ী হলেও, সর্বশেষ ১ জনকে বেছে নিতে হল লটারিতে! অবশেষে, রবিবার রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার (Midnapore District Sports Association) ২০ জন জয়ী সদস্যের নাম ঘোষণা করা হল নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের পক্ষ থেকে। আর, ফলাফল ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাসে মাতলেন জয়ী সদস্যদের সমর্থকেরা। স্লোগান উঠলো- ‘খেলা হবে!” শাসকদলের সমর্থকদের কাঁধে চেপে বিজয় উদযাপন করতেও দেখা গেল বিরোধী দলের ‘মুখ’ হিসেবে পরিচিত জয়ী সদস্যদের!

thebengalpost.net
জয়ী টিমের ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী, সঞ্জিত তোরই, বাবলু দিগার, সুতীর্থ সাউ:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থার (DSA) ২৭১ জন সদস্যের মধ্যে এদিন ভোট দিতে এসেছিলেন ২৬৩ জন। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ৬ জনের ভোট বা ব্যালট পেপার। ২৫৭ জন সদস্য বা ভোটার নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ২০ জনকে বেছে নিয়েছিলেন। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, সর্বাধিক ১৯৬টি ভোট পেয়ে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হয়েছেন জেলা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা, মেদিনীপুর পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠক শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়! এরপরের, ১৮ জন হলেন যথাক্রমে- ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী (১৮৩); সুব্রত কুমার পান (১৭০); সুধাময় সরকার (১৬৮); দীনেন রায় (১৬৮); সুজয় হাজরা (১৬০); উদয় রঞ্জন পাল (১৫৭); সঞ্জিত তোরই (১৫৬); বিজয় কুমার পাটি (১৫৪); ইতি বর্মন মজুমদার (১৫১); গৌরীশঙ্কর সরকার (১৪৭); তারাপদ পাল (১৪৫); কুন্তল বোস (১৪১); প্রশান্ত কুমার ঘোষ (১৪০); সুনীল বরণ সামন্ত (১৩৯); বাবলু দিগার (১২৮); সুতীর্থ সাউ (১২৫); অজিত কর (১২৫); অমিয় কুমার দত্ত (১২৩)। অপরদিকে, প্রদ্যোৎ কুমার ঘোষ ও সত্যব্রত সিনহার মধ্যে টাই হয়ে যায়। দু’জনেরই প্রাপ্ত ভোট দাঁড়ায় ১২০-টি করে। শেষমেশ, লটারির মাধ্যমে জয়ী হন প্রদ্যোৎ ঘোষ।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ কমিটি নির্বাচনের ২০-টি আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন ৪৩ জন প্রার্থী বা সদস্য। যদিও, মনোনয়ন তুলেছিলেন ৫০ জন। পরে ৭ জন প্রত্যাহার করে নেন। দু’টি প্যানেল তৈরি হয়েছিল। বলা ভালো, দু’টি গোষ্ঠী বা শিবিরের মধ্যেই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। দুই গোষ্ঠীই নিজেদের প্যানেলে ২০ জনকে রেখে প্রচার চালিয়েছিলেন গত কয়েকদিন ধরে। একটি প্যানেলে ছিলেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক ও এমকেডিএ চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ, কাউন্সিলর (মেদিনীপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের) তথা জাতীয় রেফারি ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী, মহাকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জিত তোরই থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা ও ক্রীড়া সংগঠক শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ ও বর্তমানে বিশিষ্ট প্রশিক্ষক তথা বাম সমর্থক প্রাক্তন শিক্ষক সুব্রত পান, স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক উদয় রঞ্জন পাল প্রমুখ। অন্য প্যানেলের উল্লেখযোগ্য নামগুলি ছিল- তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক অশিস চক্রবর্তী (নান্টি); বিশিষ্ট ফুটবলার ও প্রশিক্ষক অজিত কুমার কর; প্রাক্তন ফুটবলার ও প্রশিক্ষক তথা ক্রীড়া সংগঠন গৌরীশঙ্কর সরকার; ক্রীড়াবিদ ও প্রশিক্ষক তথা অধ্যাপক স্বদেশ রঞ্জন পান; বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস; বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার সত্যব্রত সিনহা (ছোটু) প্রমুখ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয়ী হলেন সুজয়, দীনেন’দের প্যানেলের ১৮ জন। আশিস, গোরীশঙ্কর’দের প্যানেলের মাত্র ২ জন জয়ী হলেন। তাঁরা দু’জন হলেন যথাক্রমে- স্বয়ং গৌরীশঙ্কর সরকার এবং অজিত কুমার কর। লটারি বা টাই-ব্রেকারে হারতে হল সত্যব্রত সিনহা-কে। পরাজিত হলেও, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ে ছিলেন স্বদেশ রঞ্জন পান (১১৯); জগবন্ধু অধিকারী (১১৮); আশিস চক্রবর্তী (১১৬); তাপস দে (১১৩); গৌতম দেব (১১৩)-রা। অন্যদিকে, সুজয়দের প্যানেলের যে ২ জন পরাজিত হয়েছেন, সেই গোলোক গুহ এবং সেখ আলী আকবর ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে- ১০৫ ও ১০৩।

thebengalpost.net
জয়ের উচ্ছ্বাস, মধ্যমণি শম্ভুনাথ (হলুদ পাঞ্জাবি):