মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ ফেব্রুয়ারি: টেট (Primary TET- 2022) এর মেধাতালিকায় প্রথম তিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন কন্যা! ১৩২ নম্বর (১৫০ এর মধ্যে) পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন বেলদা’র মেঘনা চক্রবর্তী এবং পিংলা’র দীপিকা রায়। ১৩১ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন বেলদা এলাকারই মনামী অধিকারী। এছাড়াও, ১৭৭ জনের মেধাতালিকায় (প্রথম দশে) তাপসী বাগ (চতুর্থ/ ১৩০ নম্বর) সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেকেই আছেন। উল্লেখ্য যে, এর আগে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে এখনও নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে পর্ষদ ও কমিশনকে। চলছে সিবিআই তদন্ত। বাতিল হতে চলেছে হাজার হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি। সেই পরিস্থিতিতে এবার একেবারে ‘মেধাতালিকা’ প্রকাশ করে আপাদমস্তক স্বচ্ছতার নজির গড়তে মরিয়া প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
এদিকে, মেধাতালিকার প্রথম তিনে জায়গা করে নিয়ে নজর কেড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন কন্যা। এতো ভালো ফলাফলে বিস্মিত তাঁরা নিজেরাও। প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর! তবে, এজন্য যে তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তাও জানিয়েছেন তাঁদের পরিবার-পরিজন থেকে এলাকাবাসী। পশ্চিম মেদিনীপুরের মেঘনা’র বাড়ি বেলদায়। বাবা সুজিত চক্রবর্তী রেলের একজন ঠিকাদার এবং এলাকার সুপ্রতিষ্ঠিত একজন সমাজকর্মী বলে জানা যায়। মেঘনা প্রথম থেকেই মেধাবী বলে স্থানীয়রা জানান। মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক নজরকাড়া রেজাল্ট। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে সাম্মানিক স্নাতক (Honours in English) ও স্নাতকোত্তর (M.A in English) সম্পন্ন করার পর বি.এড (B.Ed) প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। তবে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক (Competitive) পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন মেধাবী এই পড়ুয়া। মেঘনা জানান, প্রাথমিকে শিক্ষকতার থেকেও তাঁর নজর বেশি ডব্লিউবিসিএস (WBCS) এ সফল হওয়ার দিকে। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছেন মেঘনা। এই মুহূর্তে তিনি কলকাতায় আছেন। বাবা সুজিত চক্রবর্তী জানান, “মেয়ে বই ভালোবাসে। তাই, কলকাতা বইমেলায় গেছে।”
অপরদিকে, দীপিকা পিংলার ধনেশ্বরপুরের মেয়ে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে দীপিকা’র স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়া। বাবা গোপাল রায় চাষবাস করেন। একটি ছোটো মুদি দোকানও আছে। এর আগে, ২০১৭ সালের টেটেও পাস করেছেন দীপিকা। পর্ষদের ২০২৩ এর নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অংশ নিয়েছেন তিনি। গত ১৭ জানুয়ারি (২০২৩) সল্টলেকের প্রফুল্ল চন্দ্র ভবনে গিয়ে ইন্টারভিউও দিয়েছেন দীপিকা। দীপিকা ডিএলএড (D.El.Ed) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ইংরেজিতে এম.এ করছেন। স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়া। দীপিকা বলেন, “গ্রামের যে স্কুলে নিজে পড়াশোনা করেছি। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হলে খুব খুশি হব।” অন্যদিকে, বেলদা থানারই পাটপুরের বাসিন্দা মনামী মেধাতালিকায় ১৩১ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। বাবা অশোক অধিকারী সরকারি চাকুরে। মেধাবী ছাত্রী মনামী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা (Physics)’র ছাত্রী ছিলেন। নিয়েছেন বি.এড প্রশিক্ষণ। এখন তিনি কলকাতার বেলঘরিয়াতে ডব্লিউবিসিএস (WBCS) এর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। লক্ষ্য WBCS অফিসার হওয়া হলেও, প্রাথমিকে শিক্ষকতার সুযোগ পেলে, তিনি অবশ্যই তা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপরই যে ভবিষ্যতে টেট পাস, বি.এড প্রশিক্ষিতদের ভাগ্য নির্ভর করবে, তা মানছেন মেঘনা ও মনামী দু’জনই।