দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুন: ২০১২ সালের ১২ অগস্ট। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে এক সরকারি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রধান বক্তা। তাঁর ভাষণের মাঝেই শিলাদিত্য চৌধুরী নামে স্থানীয় এক কৃষক সিকিউরিটি জোনের সামনে এসে গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “দিদি সারের দাম বাড়ছে কেন? আর, ধানের দাম কমে যাচ্ছে কেন?” মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ থামিয়ে পুলিশ কর্তাদের বলেন, “ওই ব্যক্তি এখানে কী করে ঢুকল? ও আসলে মাওবাদী। সিপিএম পাঠিয়েছে। ধরুন, ধরুন ওকে।” এরপরই, পুলিশ কর্তাদের মধ্যে তত্‍পরতা শুরু হয়ে যায়। পেশায় কৃষক তথা বিনপুরের প্রতিবাদী যুবক শিলাদিত্যকে ধরে মঞ্চের পিছনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, “দেখলেন তো, কেমন হাতেনাতে মাওবাদী ধরে দিলাম?” ওই ঘটনার পর শিলাদিত্যকে ১৪ দিন জেল খাটতে হয়। তারপর জামিন পেয়ে গেলেও, মামলার বোঝা আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে শিলাদিত্যকে। আজ অর্থাৎ রবিবার দুপুরে জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিড়াকাটা বাজারে নেহাতই কাকতালীয়ভাবে সেই শিলাদিত্য’র মুখোমুখি হয়ে যান সেদিনের তৃণমূল সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত সৈনিক এবং বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন অবশ্য শুভেন্দু শিলাদিত্যকে ‘রাষ্ট্রবাদী’ তকমা দেন! বলেন, “শিলাদিত্য মাওবাদী নয়, ও রাষ্ট্রবাদী।”

thebengalpost.net
পিড়াকাটা বাজারে শিলাদিত্যর সঙ্গে শুভেন্দু :

প্রসঙ্গত, দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভীমপুর ও পিড়াকাটাতে পদযাত্রা করেন শুভেন্দু অধিকারী। বেলা বারোটা নাগাদ শুভেন্দু যখন পিড়াকাটাতে পদযাত্রা শুরু করেন, ঠিক সেই সময়ই মেদিনীপুর-বেলপাহাড়ি রুটের ‘রাধাগোবিন্দ’ নামে একটি যাত্রীবাহী বাস মেদিনীপুর থেকে লালগড়ের দিকে যাওয়ার পথে পিড়াকাটাতে এসে থামে। পিড়াকাটা বাজারে বাসটি দাঁড়ানোর সাথে সাথেই, শুভেন্দু অধিকারীকে দেখতে পেয়ে বাসের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে এক ব্যক্তি কথা বলার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েন! বিষয়টি শুভেন্দুর নজরে আসে। ততক্ষণে অবশ্য বাসের জানালা দিয়ে মুখ বাড়ানো ওই ব্যক্তিকে চিনতে পারেন বিরোধী দলনেতা। বলে ওঠেন, “শিলাদিত্য!” এরপর, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য শিলাদিত্যর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। শিলাদিত্য জানান, তিনি এখন এই বাসে হেলপারি বা সহযোগীর কাজ করেন। এরপর আরও দু-একটি কথা হয় তাঁর সাথে। তারপরই ছেড়ে দেয় বাস। শুভেন্দু জোর গলায় বলে ওঠেন, “শিলাদিত্য মাওবাদী নয়, রাষ্ট্রবাদী।” পরে শিলাদিত্য সাংবাদিকদের জানান, “শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছি। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ওঁকে ২০১২ সালের মামলার বিষয়টি জানিয়েছি। সাহায্যও চেয়েছি। উনি মাথা নেড়ে চলে গিয়েছেন। এর বেশি কথা হয়নি।”

উল্লেখ্য যে, বিনপুরের কৃষক পরিবারের সন্তান শিলাদিত্য সংসার চালানোর তাগিদে গত কয়েক বছর ধরেই বাসে হেলপারির কাজ করেন। গত ৩ মাস ধরে মেদিনীপুর-বেলপাহাড়ি রুটের ‘রাধাগোবিন্দ’ বাসে হেলপার হিসেবে যোগ দিয়েছেন, বাসের মালিক রবিবার বিকেলে এমনটাই জানান। সেই সূত্রেই এদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাথে। ১১ বছর আগের মামলা থেকে কিভাবে নিষ্কৃতী পাওয়া যায়, সেকথাও বিরোধী দলনেতাকে জানাতে চান শিলাদিত্য। তবে, ভিড়ের চাপে ও মাইকের আওয়াজে বিরোধী দলনেতা তা কতটা শুনতে পেয়েছিলেন, এনিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়! সম্প্রতি, ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে ‘ক্লিনচিট’ পেয়েছেন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। তা নিয়ে আফসোস করে শিলাদিত্য বলেন, “এবার আমারও তো ক্লিনচিট পাওয়া উচিত!” তাঁর স্ত্রী খুকুমণি চৌধুরী বলেন, “অম্বিকেশ মহাপাত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আমি সরকারকে বলব, দিদিকে বলব, ওকেও ছেড়ে দিন।” শিলাদিত্য অবশ্য মামলা নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাহায্যও চেয়েছেন। ২০১৩ সালেও একবার বিজেপির কাছাকাছি এসেছিলেন শিলাদিত্য। তবে, কোনভাবেই মামলার ফাঁস থেকে মুক্তি মেলেনি! শুধু কি তাই? হাজতবাসের অপমান আর মামলার বোঝা আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আতঙ্কের সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে শিলাদিত্য বলেন, “দিদিকে প্রশ্ন করেছিলাম, ধানের দাম কম কেন? সারের দাম বেশি কেন? দিদি আমাকে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করান। দু’দিন পরে বিনপুর লকাপে পুরে দেয়।”

thebengalpost.net
রবিবার টোটো চেপে প্রচারে শুভেন্দু অধিকারী :