তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ জুলাই:”ইঁদুরের দাপটে দেওয়ালের কিছু অংশ আলগা হয়ে গিয়েছিল। সেই দেওয়াল গুলির উপর চাপ পড়ার পরই কিছু অংশ ভেঙে যায়। তার প্রতিক্রিয়ায় পাশের দেওয়াল-ও ভেঙে পড়ে।” প্রায় দেড়শো বছরের সুপ্রাচীন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত ভগবতী বিদ্যালয়ের মাটির তৈরী ‘হেরিটেজ’ ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় এমনটাই পর্যবেক্ষণ, পূর্ত দফতরের (PWD) দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অঞ্জন মিত্রের। তাঁর মতে, “কাজের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ত্রুটি ছিল না। সচেতন ভাবে প্রতিটি কাজ করা হচ্ছিল। বেঙ্গালুরু IISC’র পরামর্শ নিয়েই কাজ করা হচ্ছিল। যাঁরা এই কাজ করছিলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মাটির কাজই করেন। এই জেলার লোককে দিয়েই কাজ করানো হচ্ছিল। যেখানে বাঁশ ছিল, সেখানে কাঠের পাটাতন ব্যবহার করা হয়েছে। কাজের বিষয়ে বিন্দুমাত্র আপোষ করা হয়নি। তবে, ইঁদুর কিছু কিছু দেওয়াল আলগা করে দিয়েছিল। তার উপর চাপ পড়েই এই ঘটনা!” প্রথমে ক্যামেরা দেখে বিরক্ত হলেও, পরে ‘রাগ’ প্রশমিত করে, মঙ্গলবার এই কথাগুলি-ই বলেন অঞ্জন বাবু। যদিও, এলাকাবাসী এখনও দাবি করছেন, ঠিকাদারি সংস্থার গাফিলতিতেই ভেঙে পড়েছে বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত হেরিটেজ বাড়িটি!
উল্লেখ্য যে, সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই ভবনের বেশ অনেকখানি অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে! সর্বস্তর থেকেই অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হয়েছিল পূর্ত দফতরের দিকে। তারপরই মঙ্গলবার বিদ্যাসাগরের তৈরি ভেঙে পড়া হেরিটেজ বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা পিডব্লিউডি’র ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। আর তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পি ডব্লু ডি অপরিকল্পিতভাবে এই বাড়িটির কাজ করছিল গত দেড় বছর ধরে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম দ্বি-শতবার্ষিকী উপলক্ষে বীরসিংহে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই ভবনটিকেই ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছিলেন। বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে ছিল, ‘হেরিটেজ কমিশন’। তাঁদের পক্ষ থেকেই সংস্কারের কাজ করানো হচ্ছিল পূর্ত দপ্তরকে দিয়ে। অভিযোগ, স্কুল পরিচালন কমিটি থেকে শুরু করে এলাকার মানুষজন বাড়িটির কাজের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এমনকি, এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের-ও অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। বাড়িটি সংস্কারের সময় কোন বোর্ড লাগানো হয়নি বলেও অভিযোগ। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বীরসিংহ ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির সেক্রেটারি তথা মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস সহ একাধিক প্রশাসনিক কর্তা। তাঁরা এই বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেননি! দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন মিত্রকে সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রথমে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, “আমি আপনাদের বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আসিনি।” একপ্রকার তিনি সংবাদ মাধ্যমের মাইক্রোফোন বা বুম-কে হাত দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে অবশ্য, ইঁদুরের উপর দায় চাপান! এলাকাবাসীর মন্তব্য, “দেড়শো বছরেও ইঁদুর কিছু করতে পারলনা! PWD দায়িত্ব নেওয়ার পর-ই ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে গেল!”